পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৬
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

রহস্যময় অন্ধকার ভেদ করিয়া উর্দ্ধে উঠিয়াছে। প্রত্যেক গুপ্তস্থানে, প্রত্যেক কোণে, এক একটি প্রতিমা অধিষ্ঠিত; কোনটা বা বামনের ন্যায় ক্ষুদ্র, কোনটা বা দৈত্যের ন্যায় বিকটাকার, কিন্তু সবগুলিই কাল-বশে। লুপ্তাঙ্গ; কাহারও বা বাহুর অংশমাত্র-কাহারও বা আধখানা মুখ অবশিষ্ট রহিয়াছে।

 আমি অদীক্ষিত দর্শক—আমি-মাঝের বৃহৎ পথটি দিয়া উপরে উঠিতেছি -সে পথটি সকলেরই নিকট অবারিত। চারিধারে,এক-একটি অখণ্ড প্রস্তরে গঠিত চমৎকার স্তম্ভশ্রেণী-নক্সা ও আকৃতিচিত্রে সমাচ্ছন্ন; উহাদের তলদেশ এক-মানুষ-সমান উচ্চপদঘর্ষণে তেলা ও চিকচিকে হইয়া উঠিয়াছে। কত কত শতাব্দী হইতে, এই সকল সঙ্কীর্ণ পথের ছায়ান্ধকারে, কত অগণ্য ঘর্মাক্ত নগ্নগাত্র মনুষ্য অবিরাম চলিয়াছে; এই সকল শৈলকুট্টিম, তাহাদেরই স্বেদজল গভীররূপে শোষণ করিয়াছে। শৈল-মন্দিরের গায়ে—এমন কি, উহার সোপান-ধাপ ও টালিতে পর্য্যন্ত—কতকাল পূর্ব্বে, লেখাক্ষর ও সাঙ্কেতিক চিঃ সকল ক্ষোদিত হইয়াছিল, কিন্তু সে সমস্ত এখন দুর্বোধ ও দুর্নিরূপ্য হইয়া পড়িয়াছে;—বিচরণকারী লোকদিগের পাণিতল ও নগ্ন পদের ঘর্ষণে অতি ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হইয়া গিয়াছে।

 প্রথমেই কতকগুলি ভজন-মণ্ডপ; এত জনতা যে নিশ্বাস রুদ্ধ হইয়া যায়। এইখানে ভক্তজন অন্ধকারের মধ্যে বন্দনা গান করিতেছে। আর একটু উচ্চে একটি দেবালয়, ক্যাথিড়াল’ গির্জ্জার ন্যায় বিশাল; অরণ্যবৎ স্তম্ভশ্রেণী উপরকার ভীষণ পাষাণ-ভার ধারণ করিয়া আছে। এই মন্দিরে বিধর্ম্মীদিগের প্রবেশাধিকার আছে, কেবল এই নিয়ম যে, প্রবেশ করিয়া আর অধিক অগ্রসর হইতে পারিবে না। এই দেবালয়টি কোথায় গিয়া শেষ হইয়াছে, দেখা যায় না। দূর-প্রান্তের বর্ণবিন্যাস ও ক্ষোদিত গুহাগুলি শৈলের নৈশ-অন্ধকারে বিলীনপ্রায়। শুভ্র লোমশ বস্ত্রে আচ্ছাদিত একটি বৃদ্ধের নিকট, কতকগুলি ব্রাহ্মণ-শিশু বেদ পুরাণাদি