পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৮
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

তা ছাড়া এইগুলি অধিকতর আলোকিত; কেন না, ইহার খিলানের গায়ে, স্থানে স্থানে চতুষ্কোণাকার ফাঁক আছে, যেখান হইতে নীলআকাশ পরিলক্ষিত হয়, এবং সূর্যকিরণ প্রবেশ করিয়া, বিচিত্র রঙ্গের অলঙ্কারে বিভূষিত, সোনালি-গিণ্টির কাজ-করা, মন্দিরের অংশবিশেষের উপর নিপতিত হয়। এই দেবালয়টি—যাহা গগনবিলম্বী বলিলেও হয়— ইহার উপরে কতকগুলি ছাদ আছে;—এই ছাদের উপর হইতে দেখা যায়, তাঞ্জোরের সমভূমি দূরদিগন্ত পর্য্যন্ত প্রসারিত, এবং তত্রস্থ অসংখ্য মন্দির, হরিদ্বর্ণ নারিকেল-কুঞ্জের মধ্য হইতে মস্তক উত্তোলন করিয়া আছে।

 এখন কেবল সেই সৰ্বোপরিস্থ শৈলস্ত,পটি আমার দেখিতে বাকি একটি অখণ্ড প্রস্তরের সেই স্তুপ, যাহা আদিকালের প্রলয়বিপ্লবে, অত উর্ধে নিক্ষিপ্ত হইয়া ঝুঁ কিয়া রহিয়াছে। নিম্নদেশ হইতে দ্রেখিলে মনে হয়, যেন উহা কোন জাহাজ-"গোলুই"এর অগ্রভাগ, অথবা ‘হেলমেট’-শিরফের চূড়ান্ত। এই শৈলের গা বাহিয়া একটা অপরিস্ফুট সিড়ি উঠিয়াছে, তাহার ১৪০টা ধাপ-সঙ্কীর্ণ, ক্ষয়গ্রস্ত ও এরূপ ঝোকা যে দেখিলে মাথা ঘুরিয়া যায়।

 উল্লিখিত কনক-কলস-ভূষিত ছাদের উপরেই, প্রতিরাত্রে পুণ্য-অগ্নি জ্বালানো হয়, এবং সেইখানেই মন্দিরের মুখ্য পুত্তলিকাটি, একটা প্রকাণ্ড তমসাচ্ছন্ন মণ্ডপের মধ্যে স্থাপিত। যেন কোন বন্য পশুকে রুদ্ধ করিয়া রাখিতে হইবে, এইভাবে মণ্ডপের চারিধার মজবুৎ লোহার গরাদে দিয়া ঘেরা। বিগ্রহটি কৃষ্ণবর্ণ ভীষণ গণেশ—স্বকীয় পিঞ্জরের দূরপ্রান্তে, অন্ধকারের মধ্যে বসিয়া আছেন।—একেবারে গরাদের ধারে না আসিলে স্পষ্ট দেখা যায় না। ইহার গজকর্ণ ও গজশু স্বকীয় লম্বোদরের উপর ঝুলিয়া পড়িয়াছে, এবং ইহার প্রস্তরময় দেহটি, ঈষৎ ছাই-রঙ্গের ছিন্ন মলিন চীরবস্ত্রে আচ্ছাদিত। এই উত্তঙ্গ ব্যোমমার্গস্থ কারাগুহে বন্দীর ন্যায় আবদ্ধ থাকিয়াও, ইনি একাকী সেই সর্ব্বোপরিস্থ