পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৪
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ
১২৪

শেষ তোরণের উভয় পার্শ্বে কতকগুলি জীবন্ত হস্তী প্রস্তর-চাতালের উপর শিকল দিয়া বাঁধা। এই বৃদ্ধ হস্তীগুলি অতীব পবিত্র বলিয়া পরিগণিত। এখন ইহারা আনন্দে বৃংহিতধ্বনি করিতেছে। ভক্তগণপ্রদত্ত তরুণ বৃক্ষের ডালপালা চর্বণ করিতেছে। যেমন এক দিকে অসংখ্যমূর্ত্তিসমন্বিত এই সমস্ত গুরুভার মন্দিরচূড়ার গম্ভীর মহিমা, তেমনই আবার। চতুষ্পর্শ্বে কতকগুলা নিতান্ত গ্রাম্য জিনিস থাকায় বড়ই বিসদৃশ বলিয়া মনে হয়; কতকগুলি চালা-ঘর, কতকগুলা ঘোট ঘোট সেকেলে শকট, আদিমকালের শ্রমকার্য্যোপযোগী কৃতকগুলা সামগ্রী ইতস্ততঃ পড়িয়া: রহিয়াছে। এই পুরাতন প্রকারের পাদদেশে সমস্তই ভগ্ন চূর্ণ, সমস্তই বিলুপ্তমুখশ্রী। না জানি কোন্ সুদূর অতীতের নৃশংস বর্বরতা এই প্রাকারটির উপর ধ্বংসের ছাপ রাখিয়া গিয়াছে।

 সূর্য অস্তগত। দ্বারদেশ পার হইয়া ভিতরে প্রবেশ করিব-সে সময় আর নাই। গুরুভার প্রস্তর-খিলানের নিমে, মন্দিরের অফুরন্ত মণ্ডপগুলির মধ্যে সন্ধ্যা দেখা দিয়াছে। তবে যে আমি প্রবেশ করিতেছি, সে কেবল কল্যকার রথযাত্রার কথা মন্দিরপুরোহিতদিগের নিকট জিজ্ঞাসা করিবার নিমিত্ত। ক্ষুদ্র চলন্ত ছায়ামূর্ত্তিবৎ ঐ সকল পুরোহিত, স্তশ্রেণীর অসীমতার মধ্যে কোথায় যেন হারাইয়া গিয়াছে।

 উহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিয়া আমি যে কথা জানিতে পারিলাম, তাহা অতীব অস্পষ্ট ও পরস্পরবিরোধী। যথা,—বিষ্ণুদেবের রথযাত্রা আজ রাত্রেই, কিংবা আরও বিলম্বে আরম্ভ হইবে। দিন ক্ষণের উপর, তিথি নক্ষত্রের উপর সমস্তই নির্ভর করিতেছে।” * * * আমি বেশ বুঝিতে পারিতেছি, উহাদের ইচ্ছা নয়, আমি এই উৎসবে যোগ দিই।

 এক প্রান্ত হইতে অপর প্রান্ত পর্য্যন্ত বরাবর দেওয়ালের ধারে ধারে দুই-সারি অদ্ভুত বিচিত্র ব্যাঘ্র, এবং স্বাভাবিক অপেক্ষা বৃহৎ রোষদীপ্ত অশ্ববৃন্দ অঙ্কিত—এইরূপ একটি গভীরনিনাদী সরু পার্শ্ব-দালানের মধ্যে,