পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩২
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ
১৩২
ইহার পুনরাবৃত্তি হইতেছে। মন্দিরের প্রস্তরময় বীথিগুলির শেষ প্রান্ত পর্য্যন্ত এবং উচ্চ নিম্ন সমস্ত দালানে, আমার চতুর্দিকে, পাকচক্রাকারে ঐ শব্দ ঘুরিয়া বেড়াইতেছে, অথচ কাকগুলা আমার নিকট অদৃশ্য। সমস্ত মন্দির এই কা-কা-রবে অণুরণিত। মন্দিরের পবিত্র ছায়াতলে যে সকল দেবতা বাস করেন—এই প্রভাতিক অভ্যর্থনা-গীতি তাঁহাদের চিরপ্রাপ্য।

 শেষ দীপটি পর্য্যন্ত নিভিয়া গিয়াছে। চন্দ্রমা আর কিরণ বর্ষণ করিতেছেন না। গতকল্য অপেক্ষা আজিকার রাত্রি এই মন্দিরে যেন আরও ঘনীভূত। শীঘ্রই প্রভাত হইবে—ইহা বুঝিবার জন্য বিহঙ্গ-সুলভ তীক্ষ্ণদৃষ্টির প্রয়োজন। মন্দিরের সাগুলি গোরস্থানের ন্যায় অর্দি, সেই জন্য শৈত্য-বিভ্রম উপস্থিত হইতেছে। কিছুই দেখা যায় না। কদাচিৎ দুই একটি অপরিস্ফুট আলোকচ্ছটা,—(যে অন্ধকারে চতুর্দিক আচ্ছন্ন, তাহা অপেক্ষা কিছু কম অন্ধকার, এইমাত্র দুই এইটি ক্ষীণ রশ্মি, খিলানমণ্ডলের বায়ুরন্ধ, দিয়াছিদ্র দিয়া প্রবেশ করিতেছে। পরে বিভিন্ন দিক হইতে, এই কা-কা-রবে সহিত পালোকের ‘ফফর’ শব্দ, ডানার ‘ঝটাপট’ শব্দ সংযোজিত হইল। এইবার কৃষ্ণবর্ণের পিণ্ডগুলা উড়িয়া যাইবে।••••••

 এইবার আলোক আসিয়াছে!•••••••••এ দেশে আলোক যেমন শীঘ্র চলিয়া যায়, তেমনই আবার শক্সি আইসে,•••••••••এত শশ্ন যে নাট্যবিভ্রম বলিয়া মনে হয়। সুদূরপ্রসারিত শুম্ভশ্রেণী পাণ্ডুর স্বচ্ছতায় অনুরঞ্জিত হইল;—উহা এত স্বচ্ছ যে মনে হয়, বুঝি দূরস্ত বস্তুর ছায়াপাত হইয়াছে। ধূসর পাতলা রেশমী কাপড়ের অবগুণ্ঠনের মধ্য দিয়া, স্পর্শাতীত বিবিধ শোভন ছবির ছায়াবাজি যেন দৃষ্ট হইতেছে! মন্দির-দালানের বিন্নি প্রকাণ্ড বিভাগগুলি নেত্রসমক্ষে প্রকাশিত হইল; দালানের চতুস্পথগুলি শেষ প্রান্তে মিলাইয়া গেল। আমার পশ্চাদ্ভাগে, যেখানে গতকল্য সায়াস্ত্রে এক জন পুৰোহিতের নিকট রথযাত্রা সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করিয়াছিলাম, সেই রোষদীপ্ত-বিকাটাকার-জন্তু-চিত্রময় বীথিটিতে সেই জন্তুদের ছায়া-ছবি