পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তাঞ্জোরের অদ্ভুত শৈল।
১৩৩

আবার দৃষ্টিপথে পতিত হইল। যে সকল নরমূর্তি ভূতলে শুইয়া ছিল, সেই সকল মম-বস্ত্র-পরিহিত মূর্তিগুলা খাড়া হইয়া উঠিল;—বাহুদ্বয় প্রসারিত করিয়া, পশ্চাতে শরীর হেলাইয়া, যাতায়াত করিতে লাগিল। এই অবাস্তব, বর্ণহীন, ঐন্দ্রজালিক দৃশ্যের মধ্যে, এই শুভ্রবসন স্বচ্ছ মূর্তিগুলিব পদসঞ্চারশব্দ শুনিয়া আশ্চর্য হইতে হয়।

 গতকল্য যে সানের উপর আমি নিদ্রা গিয়াছিলাম, তাহার নিকটে একটা পাথরের সিঁড়ি মন্দিরের ছাদ পর্য্যন্ত উঠিয়াছে। একটু হাতড়াইয়া ঠাণ্ডা দেওয়ালের উপর হাত বুলাইয়া সেই সিঁড়িটা খুঁজিয়া বাহির করিলাম।

 ছাদের উপরে উঠিলাম। আমি এখন একাকী। গুরুভার, সমতল, খিলান-মণ্ডলের উপর এই ছাদ মরুভূমির ন্যায় ধূধূ করিতেছে। ইহা বড় বড় পাথরের চাক্কা দিয়া বাধানো। উহার দুই ধার প্রসারিত হইয়া দূরবর্তী আকাশের জলদচূড়ায় পর্যবসিত হইয়াছে। নিম্নতলের ন্যায় এখানেও ছায়াবাজির দৃশ্য;—আর একটি পাণ্ডুবর্ণের চিত্রাবলী। এখানে একটু ফর্সা হইয়াছে, কিন্তু এখনও দিন হয় নাই। মন্দিরের অভ্যন্তরে যেরূপ সমস্তই অবাস্তব বলিয়া মনে হইতেছিল, এখানেও সেইরূপ মনে হইতেছে। এই বিস্তীর্ণ ময়দানের চতুর্দিকে যে জলদ-চূড়াগুলি দেখা যাইতেছে, উহা বাষ্পরাশি বই আর কিছুই নহে;—রাত্রিকালে বাষ্পরাশি ঘনীভূত হইয়াছে মাত্র। এই বাষ্পরাশি ঈষৎ নীল রঙ্গের তূলা-ভরা গদীর ন্যায় এরূপ স্থূল যে মনে হয়, আর একটু নিকটে গেলেই উহাকে হস্তের দ্বারা স্পর্শ করা যাইতে পারে। সমস্ত ভূমি ঐ তুলারাশির মধ্যে এরূপ মগ্ন হইয়া আছে যে, কালো কালো কতকগুলা তালপক্ষপুঞ্জ অথবা তালপত্রগুচ্ছ উহার মধ্য হইতে শুধু মাথা বাহির করিয়া আছে। ঐগুলি উচ্চতম তালবৃক্ষের চূড়াদেশ।

 সমুদ্রাভ মণি’র ন্যায় রং—দিব্য শোভন-স্বচ্ছ—এক প্রকার হরিৎ আলোকে উদয়গিরির দিঙমণ্ডল পরিব্যাপ্ত হইল; যেন তৈলের একটি