পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তাঞ্জোরের অদ্ভুত শৈল।
১৩৫

দিয়া কিছু পূর্ব্বে স্বর্ণবিগ্রহটিকে লইয়া যাওয়া হইয়াছিল—সেই সেতুটি এক্ষণে উঠাইয়া লওয়া হইল। এইবার এক দল কৃষ্ণকায় বাদক এরূপ সজোরে বাদ্য বাজাইতে লাগিল যে, কর্ণ বধির হইয়া যায়, এবং এই বাদ্য এরূপ বন্য-ভীষণ ও শোকভারাক্রান্ত যে, শুনিলে শিহরিয়া উঠিতে হয়। এক দল লোক ঢাক পিটিতেছে; অপর এক দল, বিরাটাকার তুরীসমূহ সেই প্রচ্ছন্ন দেবতার অভিমুখে উত্তোলন করিয়া, উহাতে প্রাণপণে ফুৎকার করিয়া অমানুষিক ধ্বনি বাহির করিতেছে।

 রথ সাজানো হইয়াছে। চৌঘুড়ি গাড়ীর অশ্বচতুষ্টয়ের অনুকরণ করিয়া চারিটা বড় বড় কাঠের ঘোড় রথের সম্মুখভাগে স্থাপিত হইয়াছে। এই তেজীয়ান বোযদীপ্ত পক্ষিরাজ ঘোড়াগুলি পা ও ডানার আস্ফালনে আকাশকে তাড়না করিতেছে। লাল রেশমের দুর্ভেদ্য যবনিকার মধ্যে বিগ্রহটি প্রচ্ছন্ন। বিগ্রহ-সিংহাসনের চতুর্দিকে ‘ঝুলানো বাগিচা’র ন্যায় কতকগুলি পুষ্পিত কদলীবৃক্ষ স্থাপিত হইয়াছে। বস্ত্রের ঝালরে দুই তিন গজ লম্বা বৃহদাকার লোলক-সমূহ ঝুলিতেছে। স্বাভাবিক পুষ্প ও জরীজড়ানো পুষ্পমাল দিয়া এই লোলকগুলি রচিত। এই চক্রবিশিষ্ট অট্টালিকার সকল তলার উপরেই কতকগুলি উলঙ্গ প্রায় বালক অধিষ্ঠিত; প্রথমে উহারা বস্ত্রসজ্জার মধ্যে—পুষ্প-গ্রথিত রেশম-মণ্ডিত মঞ্চতলৈ লুক্কায়িত ছিল,উহারাই বিগ্রহের পাশ্বরক্ষী। যে সময়ে নিম হইতে সেই ভীষণ ভূর্য্যধ্বনি হইল, অমনই উহারাও উপর,হইতে রীনাদ করিতে লাগিল।

 এইবার সুলক্ষণ হস্তীদিগকে আনা হইল। উহারা নূতন জরীর পোষাক ও মুক্তাখচিত জরীর টুপি পাইবার জন্য, আপনা হইতেই হাঁটু গাড়িয়া বসিল। তাহার পর চলিয়া গিয়া চির-অভ্যস্তভাবে পুরোহিতদিগের পশ্চাতে দণ্ডায়মান হইল। সহযাত্রিগণ এখনও অচল স্থিৱ। যুবকেরা, সম্মুখভাগে চারি সার বাঁধিয়া, ভূতলে-প্রসারিত চারিটা বিস্তীর্ণ রঞ্জুর ধারে ধারে আসিয়া দাঁড়াইল।