পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

শেয়ালকাটার ‘গাছ দেখিতে পাই, সরোবরে রক্তপর প্রস্ফুটিত দেখি, কিংবা যখন দেখি,—একটি অপূর্ব প্রজাপতি আমার যাত্রা-পথের সন্মুখ দিয়া উড়িয়া যাইতেছে, আর বিচিত্র উজ্জ্বল রঙ্গের কোন একটি পাখী তাহার অনুসরণ করিতেছে, তখন উহা বিদেশভূমিকে আবার স্মরণ করাইয়া দেয়। কিন্তু পরক্ষণেই অবার, আমাদেরই সেই পল্লীগ্রাম,আমাদেরই সেই অরণ্যভূমি—এইরূপ বিভ্রম উপস্থিত হয়।

 সূর্যাস্তের পর, গ্রাম পল্লী আর দেখা যায় না, মনুষ্যের চিহ্নমাত্র দেখা যায় না। কবোষ্ণ বৃষ্টিজলের স্নেহ-স্পর্শ উপভোগ করিতে করিতে, গভীর অরণ্যের অফুরন্ত পথ দিয়া আমরা অবিরত ছুটিয়া চলিয়াছি। চারি দিকেই গভীর নিস্তব্ধতা।

 ক্রমে অন্ধকার হইতে লাগিল; তাহার সঙ্গে সঙ্গে এই নিস্তব্ধতাতে ঈষৎ রূপান্তরিত করিয়া কীট-সঙ্গীত সমুথিত হইল। আর্দ্র অরণ্য-ভূমির উপর সহস্র সহস্র ঝিল্লীর পক্ষ-স্পন্দন-জনিত অনুরণন-ধ্বনি উচ্চ হইতে উচ্চতর গ্রামে উঠিতে লাগিল। পৃথিবীর আরম্ভকাল হইতে প্রতিবাত্রিই এই সঙ্গীত ধ্বনিত হইয়া আসিতেছে। *

 ক্রমে ঘনঘোর অন্ধকার; আকাশ মেঘাচ্ছন্ন; ঘণ্টার পর ঘণ্টা কতক্ষণ ধরিয়া আমরা অবিরত ছুটিয়া চলিয়াছি। ক্রমে চারিদিকের দৃশ্য ঘোরতর গম্ভীরভাব ধারণ করিল। লতাবন্ধন-জালে আপদ জড়িত দুই সারি বৃক্ষের মধ্য দিয়া আমরা চলিয়াছি। নগর-উপবনে যেরূপ একজাতীয় বড়-বড় বৃক্ষ দেখা যায়, সেইরূপ বৃক্ষ একটার পর একটা আসিতেছে—তাহার আর শেষ নাই।

 কতক গুলি স্থূলকায় কৃষ্ণবর্ণ পশু অন্ধকারের মধ্যে অস্পষ্ট লক্ষিত হইতেছে। তাহারা আমাদের পথরোধ করিয়া ছিল। এই বুনো গরুগুলা নিতান্ত নিরীহ ও নির্বোধ; চীৎকার শব্দ করিয়া দুই চারিবার চাবুক আস্ফালন পালন করিবামাত্রই উহারা ইতস্ততঃ সরিয়া পড়িল। আবার পথের