পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৬
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

বীথির যে ধারে মন্দিরের প্রাচীর—সেই ধারটি এক্ষণে তমসাচ্ছন্ন, পরিত্যক্ত, বিষাদময়। কিন্তু অপর ধারে ব্রাহ্মণদিগের আবাস-গৃহের সম্মুখে, জনতার বৃদ্ধি হইয়াছে—উহারা একদৃষ্টে রথের দিকে তাকাইয়া আছে। গবাক্ষ, গুরুভার-স্তম্ভ-সমন্বিত বারাণ্ডা, বিকটাকার পশুমূর্ত্তিভূষিত সোপানাবলী-শিশু ও বৃদ্ধগণ কর্তৃক অধিকৃত। বিশেষতঃ সেখানে রমণীগণের জনতা। উহারা জরীর পাড়ওয়ালা শাড়ী পরিয়াছে, উহাদের গলায় পুষ্পমালা ঝুলিতেছে, অঙ্গে নানাবিধ অলঙ্কার ঝক্ক্ করিতেছে। উহাদের মধ্যে কেহ কেহ, পুরোহিতদিগের জন্য উপহারসামগ্রী আনিয়াছে; কেহ বা চুর্ণ-পাত্র হস্তে করিয়া, ভূতলস্থ নক্সা-চিত্র যেখানে সেখানে লুপ্ত হইয়াছে, সেই সকল নক্সা আবার তাড়াতাড়ি ফুটাইয়া তুলিতেছে। স্থানে স্থানে নূতন হলুদে ফুল বসাইয়া দিতেছে।

 কিন্তু এই উষপ্রধান দেশে, নৰভানু-উদ্ভাসিত মুক্ত আকাশ, মানবের সমৃদ্ধি-আড়ম্বর-প্রদর্শনের পক্ষে কি অনুপযোগী। যখন আমি মন্দিরের ছাদ হইতে নামিয়া আসিলাম, তখন ও শেষাবশিষ্ট মশাল গুলির দীপ্তি—স্মলিতপদ ঊষার অর্ধস্ফুট আলোকে অক্ষু ছিল। তখনও সমস্তই কুহকময় বলিয়া প্রতীয়মান হইতেছিল; কিন্তু এক্ষণে প্রভাতিক গগনের অভিনব অকলুষ স্বচ্ছতার মধ্যে সে কুহকটা ছুটিয়া গিয়াছে। এখন এই আকাশে আর কিছুই নাই, সর্ব্বত্র কেবলই অপরিসীম বিশুদ্ধতা—মনোহর হরিদ্বর্ণকি-এক প্রভাময় হরিণ—পাণ্ডুর হরিণ—যাহার নাম নাই—যাহা বর্ণনাতীত। ইহার পর, সমস্তই যেন হীন গভ, ম্লানচ্ছবি। এক্ষণে মন্দিরপ্রাচীরে জরাজীর্ণতা ও রক্তিম কুষ্ঠক্ষত-সকল প্রকাশ পাইতেছে। এখন যেন সমস্তই বেশী বেশী দেখা যাইতেছে। এ সমস্ত ঢাকিয়া রাখিতে হইলে, হয় নিশার আবরণ আবশ্যক, নয় দুর্নিরীক্ষ্য মধ্যাহ-সূর্যের দীপ্তপ্রভার প্রয়োজন। রথের বিলাস-সজ্জা নিতান্তই স্থূল ও শিশুচিত্তহারী। হস্তীদের পরিচ্ছদ জীর্ণ ও বহু-ব্যবহৃত। যুবতী ললনাদের মুখমণ্ডর ও