পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তাঞ্জোরের অদ্ভুত শৈল।
১৩৯

প্রাপ্ত হইয়া, অথবা মায়াময় ব্যক্তিত্ব হইতে মুক্তিলাভ করিয়া, বিশ্বায়ার মধ্যে বিলীন হইয়া গিয়াছে—সেই সব পূৰ্বপুরুষের উদ্যম চেষ্টায় রথ এতকাল চলিয়াছে।

 রথ অবশ্যই চলিবে। রথ চলিবে বলিয়া বৃদ্ধ পুরোহিতদিগের ধ্রুব বিশ্বাস। সেই জন্য তাহারা অবিচলিতভাবে প্রতীক্ষা করিতেছে। তাহাদের নেত্রে অন্যমনস্কভাব; তাহাদের আত্মা ইহারই মধ্যে যেন তপঃক্লিষ্ট দেহ হইতে বিমুক্ত। এমন কি, হস্তীরা পর্য্যন্ত জানে যে, রথ চলিবে; তাই তোহারাও অতীব প্রশান্তভাবে অপেক্ষা করিতেছে। তাহাদের মনে যে চিন্তাপ্রবাহ চলিতেছে, আমাদের নিকট তাহা দুরবগাহ হইলেও, এই সব চিন্তায় তাহাদের বৃহৎ মস্তিষ্ক পূর্ণ। তাহাদের মধ্যে যে হস্তী সর্ব্বজ্যেষ্ঠ, সে বিলক্ষণ জানে, রথ এক সময়ে চলিবেই চলিবে। কেন না, তাহারা তিন চারি পুরুষ হইতে বংশানুক্রমে, মানববাহুকে রজু ধরিয়া রথ টানিতে দেখিয়াছে;—শত বৎসর হইতে এইরূপ দৃশ্য প্রত্যক্ষ করিয়াছে।

 চলে এসো! আনো ফিনা, আনো কপিকলের রসারসি; উঠাও চাড়া দিয়া! এক দল মুটিয়ার কাঁধে কতকগুলা কাঠের গুড়ি আসিয়া পৌছিল। একটা গুড়ির প্রান্তদেশে একটু ছিলকা উঠাইয়া, আবদ্ধ চাকাটির নীচে সেই প্রান্তভাগ স্থাপিত হইল; এবং গুড়ির উচ্ছিত অপর * প্রান্তের উপর অশ্বারোহীর ধরণে দশ জন লোক বসিয়া ঝকানি দিতে লাগিল; ও দিকে, কপিকলের রসারসি ও,রজ্জ্বগুলিতেও এক সঙ্গে টান পড়িল। এইবার সেই পর্ব্বত-শিখর একটু নড়িল! একটা আনন্দের কোলাহল সমুখিত হইল;—রথ চলিল!

 ভূমিতে চারিটা গভীর খাত খনন করিয়া রথচক্র ঘুরিতে ঘুরিতে চলিল। অক্ষদণ্ডের আর্তনাদ, নিষ্পেষিত কাষ্ঠের কাতরধ্বনি, মনুষকণ্ঠের কোলাহল ও পবিত্র ভূরীর ঘোর নিনাদ যুগপৎ সমুথিত হইল। শিশু-সুলভ আনন্দ উচ্ছসিত হইল; সমস্ত আস্ত-বিবর উদঘাটিত হইল; জয়ধ্বনি করিবার,