পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪০
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

জন্য সমস্ত অশুভ্র দন্তপাঁতি বিকশিত হইল; সমস্ত বাহু শূন্যদেশে উৎক্ষিপ্ত হইল; এই আনন্দে উন্মত্ত হইয়া লোকেরা রঞ্জুতে টান্ দিতে বিস্মৃত হইল; -রথ থামিল! সমবেত আকর্ষণের প্রথম আবেগে, প্রায় ত্রিশপদ অগ্রসর হইয়াছিল, আবার রথ ভূমিতে আবদ্ধ হইয়া পড়িল। হস্তীর রথের পিছনে পিছনে আসিতেছিল, রথ সহসা থামিয়া যাওয়ায়, উহাদের পরস্পরের মধ্যে ঠেকাঠেকি হইতে লাগিল। আবার সমস্ত গোড়া হইতে আরম্ভ হইল।

 কিন্তু এবার শৃঙ্খলার সহিত আরম্ভ হইল। লোকেরা কপিকলের বসারসি, ফিক্‌না-আদি আনিতে গেল। এই অবসরে, রমণীগণ পুরোহিতজনতার মধ্যে তাড়াতাড়ি আসিয়া—এমন কি, নিরীহ হস্তিগণের প্রায় পদপ্রান্তে আসিয়া উপস্থিত হইল। স্বর্ণবিগ্রহের গুরুভারে, ভূতলে যে রথ্যা খনিত হইয়াছে, তাহা চুম্বন করিবার জন্য এই সময়ে সৌরকর, মন্দির-চূড়া হইতে নামিয়া আসিয়া জনতার উপর পতিত হইল, এবং উহাদিগকে নবতর শোভায় সজ্জিত করিল। সমস্ত নগ্ন বাহুতে ধাতব বলয় ঝকমক করিতেছে; রমণীগণের মুখমণ্ডলে, শলাকা-বিদ্ধ নাসিকাপুটে, হীরামাণিক্যের ভূষণ ঝিকমিক করিতেছে; অতিসূক্ষ রঙ্গিন্ মলমল অথবা জরীর পাড় বিশিষ্ট মমলের ভিতর দিয়া মীনাক্ষী শিবানীর বক্ষের ন্যায় নির্ম্মল কণ্ঠদেশ দেখা যাইতেছে।

 এইবার এই বিরাট যন্ত্রটি দমকে-দমকে ভীষণ বেগে চলিতেছে। মধ্যমধ্যে থামিতেছে—আবার চলিতেছে। এই গতিক্রিয়া ও পৈশিক বলের উদ্দাম বিলাস-লীলা দুই তিন ঘণ্টা ধরিয়া চলিবে। এই যাত্রাপথের পশ্চাদ্ভাগে, ভূমি যেন শত শত হলের দ্বারা কর্ষিত হইয়াছে—সেই ভূমি, যাহা প্রাতঃকালে যেন ‘রোলার যন্ত্রে সমীকৃত হইয়াছিল, এবং শুভ্র নক্সা-চিত্রে ও সুষমান্বিত কুসুমসমূহে বিভূষিত হইয়াছিল!

 যেখানে বীথির বক্‌ ফিরিয়াছে, এবং যে দিকে রথটিকেও ফিরাইতে