পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪২
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ
১৪২

—সেই দুরধিগম্য তমসাচ্ছন্ন রহস্য-স্থানকে বেষ্টন করিয়া এই বিচরণভূমিটি অধিষ্ঠিত।

 প্রাচীরের মাথায় যে সকল ছোট-ঘোট দেবমূর্ত্তি ঝুঁকিয়া রহিয়াছে, তাহারা বোধ হয় এই রথযাত্রা দেখিবার জন্য সমুৎসুক। কিন্তু আমি এখান হইতে কিছুই দেখিতে পাইতেছি না—কিছুই শুনিতে পাইতেছি না। নিম্নদেশের চটুল গতিবিধি আমার নিকট প্রচ্ছন্ন। এমন কি নিকটস্থ নগর, গৃহ, মার্গ, সমস্তই আমার নিকট প্রচ্ছন্ন। আমার এই শূন্য মরুক্ষেত্র সেই তাল-অরণ্যের সংলগ্ন বলিয়া মনে হইতেছে,—বাহার চূড়াগ্রভাগ দিগন্তকে নীলিম করিয়া তুলিয়াছে॥

 আমার এই দুর্নিরীক্ষ্য প্রজলন্ত আকাশ-খণ্ডে, কাক চাল ঘুরিয়া বেড়াইতেছে। মধ্যে মধ্যে সবুজ টিয়া-পাখীগুলা উড়িয়া যাইতেছে। সর্ব্বত্র টিকটিকি গিরগিটি বিচরণ করিতেছে। যে কাঠবিড়ালী ভারতের সমস্ত ভগ্ন মন্দিরসমস্ত বৃক্ষ আশ্রয় করিয়া থাকে—সেই কাঠবিড়ালিরা পরস্পরের অনুধাবন করিতেছে; পবিত্র প্রস্তররাশির মধ্যে খেলা করিয়া বেড়াইতেছে। এখানে নিঝুম নিস্তব্ধতা। এই দেবমূর্তি-সমন্বিত অদ্ভুতাকৃতি চূড়াগুলি আমার মাথা ছাড়াইয়া উঠিয়াছে,—চূড়াগুলি এত অদ্ভুত ও এত উচ্চ যে, ইহা বাস্তুনিৰ্মাণ-পদ্ধতি-বিষয়ক যুবোপীয় সমস্ত সংস্কারের বিরুদ্ধ। এই চূড়াগুলি ব্যতীত এখানে এমন আর কিছুই নাই যা আমার চিত্তে ভীতি-সঞ্চার করিতে পারে। এই চূড়াগুলির নিস্তব্ধতা অনন্ত অসীম।

 এই গগন-বিলম্বী মরুদেশের ছায়াতলে, শান্তি-আরামে এক ঘণ্টা কাণ কাটিয়া গেল। আমার প্রদর্শক ও ব্রাহ্মণ এই কবোষ্ণ পাষাণের উপবেই ঘুমাইয়া পড়িয়াছে।•••••••

 নিশ্চয়ই আমার দৃষ্টিবিভ্রম বা ঘূর্ণি-রোগ উপস্থিত!•••••ঐ অদূরে একটা চূড়া ••••এইমাত্র নড়িয়া উঠিল•••••ঐ যে আবার চলিতেছে!••••