পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৬
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ
১৪৬

অনুসারে, বালামণি প্রথমে একজন নবাবের রক্ষিত ছিল। নবাব মৃত্যুকালে, তাহার সমস্ত হীরা জহরৎ তাহাকে দিয়া যান। তাই পুত্তলীর ন্যায় তাহার সর্ব্বাঙ্গ মণিরত্নে বিভূষিত। এখন সে প্রভূত ঐশ্বর্যের অধিকারিণী ও স্বাধীন। কিন্তু তাহার ধন ঐশ্বর্য্য শিল্পকলার অনুশীলনে ও দানধর্ম্মেই ব্যয়িত হইয়া থাকে। বালামণি একটা নাট্যশালা স্থাপন করিয়াছে;আমাদের সহস্র সহস্র বৎসর পূর্ব্বে, ভারতে যে সব নাটক রচিত হয়, সেই নাটকগুলি, নিজ মনোহর অভিনয়ের দ্বারা পুনর্জীবিত করিয়া তুলিয়াছে।

 আমি আজ রাত্রে, সমুজ্জ্বল জ্যোত্মালোকে, তালীবনের মধ্য দিয়া,সেই দয়াশীলা নর্তকী বালামণির নাট্যালয়-অভিমুখে যাত্রা করিলাম। তাল-তরুর শাখাগুলি, সুদীর্ঘ ভঙ্গুর বেতসের ন্যায় অবনত হইয়া আছে, এবং সেই শাখা প্রান্তবর্তী কৃষ্ণকায় পত্রপুঞ্জ, মৃদুল অনিলে সঞ্চালিত হইয়া, পরস্পরের সহিত সংঘর্ষিত হইতেছে।

 আমি যখন আমার নির্দিষ্ট স্থানে উপনীত হইলাম, তখন বালামণি রঙ্গপীঠে অধিষ্ঠিত;—চিত্রিত পুষ্পোদ্যানের পশ্চাদ্ভাগে, পরী-প্রাসাদের ক্ষুদ্র একটি স্বর্ণময় চূড়াগৃহের মধ্যে বন্দিভাবে অবস্থিত হইয়া, গবাক্ষর সম্মুখে বসিয়া, বীণা বাজাইতে বাজাইতে গান গাহিতেছিল। বালামণি একজন রাজকুমারী, পার্শ্ববর্তী রাজ্যের কোনও রাজার সহিত তাহার বিবাহের সম্বন্ধ হয়, এবং সেই রাজা তাহার উদ্দেশে এখনই আসিয়া উপস্থিত হইবে। প্রথম আরম্ভ হইতেই, তাহার বীণা-বাদনে, তাহার কণ্ঠস্বরে, শোতৃবর্গের চিত্ত বিমোহিত। পুরাতন উৎকীর্ণ চিত্রাদি হইতে তাহার সাজসজ্জা অনুকৃত হইয়াছে। তাহার পাশ্বমুখের ছায়া-ছবিটি অপূর্ব্ব সুন্দর। এই গায়িকার প্রত্যেক অঙ্গভঙ্গিতে, তাহার ভূষণ-সমাচ্ছন্ন অঙ্গের হীরক মাণিক্যগুলি ঝিক্ মিক্‌ করিয়া জ্বলিতেছে।

 অন্য নাট্য সজ্জাগুলিতে, এমন একটি অবোধ শিশুসুলভ সারল্য, প্রকটিত যে, দেখিলে একটু আমোদ বোধ হয়; এবং সেই সঙ্গে, বিদেশ