পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তাঞ্জোবের অদ্ভুত শৈল।
১৪৯

আমার সাক্ষাৎ হইল—মাদ্রাজ-রেলপথের ষ্টেশনে;—দুঃখের বিষয়, এই রেলপথ মাদুরা পর্য্যন্ত গিয়াছে। বালামণির সঙ্গে দুই জন ভৃত্য। মফস্বলের ভূসম্পত্তি পরিদর্শন করিতে যাইবে, তাই ট্রেণ ধরিতে এখানে আসিয়াছে। এখানকার দীন-বসনা জনতার মধ্যে বালামণিকে পথহারা পরীর মত দেখাইতেছিল। দূর হইতে মনে হইতেছিল, যেন একটি তারা ঝিকমিক করিতেছে। তাহার কাণে হীরক, তাহার কণ্ঠে হীরক, তাহার বক্ষে হীরক। কর-প্রকোষ্ঠ হইতে স্কন্ধদেশ পর্য্যন্ত—তাহার সমস্ত নগ্নবাহুতে হীরক-অলঙ্কার। তাহার চারু ক্ষুদ্র নাসিকা হইতে একটি নথ ওষ্ঠ পর্য্যন্ত ঝুলিতেছে;—তাহাতে যে হীরকগুলি রহিয়াছে, তাহা আরও দুর্লভ ও উজ্জ্বল। তাহার জরির-পাড়ওয়ালা হলদে শাড়ী ও তাহার রেশ্‌মি কঁচুলি —এই উভয়ের মাঝখানে, গাত্রের কিয়দংশ দেখা যাইতেছে —আর এই গাত্র সুন্দর ধাতু-স্তম্ভের ন্যায় সুচিক্কণ—সেই সঙ্গে স্তনযুগলের অকলুষিত তলদেশও অল্প অল্প দেখা যাইতেছে; আর একটু উর্ধে, আঁটা সাঁটা পাতলা কাপড়ের মধ্য দিয়া, সলজ্জ স্তনযুগলেরও একটু আভাস পাওয়া যাইতেছে। (সায়ংকালে আমাদের রমণীরা বক্ষের উদ্ধভাগটি খুলিয়া রাখে; কিন্তু নিম্নভাগটি খুলিয়া রাখায় যে কি অসুবিধা, তাহা আমি ত বুঝিতে পারি না; উহাতে বেশী কৌশল খাটাইবার আবশ্যক হয় না—এইমাত্র) তা ছাড়া, এই নর্তকীর সাজসজ্জায় বেশ একটু সংযম ও গাম্ভীর্য্য লক্ষিত হইল। বারাঙ্গনাদিগকে যে ধরণে নমস্কার করিতে হয়, সেই ধরণে আমি উহাকে নমস্কার করিলাম। রত্ন-ভারাক্রান্ত করযুগলে ললাটস্পর্শ করিয়া ভারতীয় ধরণে সে আমাকে প্রতিনমস্কার করিল। তাহার পর, পরিজন-সমভিব্যাহারে গাড়ীতে উঠিল * * * কেবল স্ত্রীলোকদিগের জন্য যে কক্ষটি রক্ষিত, সেই কক্ষে গিয়া বসিল।

 ষ্টেশনের সমস্ত কদর্য্য সাজসজ্জা পরিত্যাগ করিয়া, যখন আমি দেশীমন্দিরের অভিমুখে যাত্রা করিলাম, তখনও আমার নেত্রমুকুরে বালামণির