পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তাঞ্জোরের অদ্ভূত শৈল।
১৫১

 এই খিলান-পথের পরেই একটা দ্বার; দেবমূর্ত্তিময় অভ্রভেদী মন্দির'চূড়ার তলদেশে, একটা অন্ধকেরে সুড়ঙ্গ-কাটা পথ। এই পথ দিয়া একেবারেই মন্দিরের মধ্যে প্রবেশ করা যায়; মন্দির না বলিয়া ইহাকে একটা নগর বলিলেও চলে; এই নিস্তব্ধ অথচ শব্দায়মান নগরটি পথে-পথে একেবারে আচ্ছন্ন—পথগুলা আড়াআড়িভাবে প্রসারিত; এবং ইহার অসংখ্য লোক সমস্তই প্রস্তরময়। প্রত্যেক স্তম্ভ, প্রত্যেক বিরাটাকৃতি পিপা এক-একটা অখণ্ড প্রস্তরে নির্মিত; কি উপায়ে যে উহাদিগকে খাড়া করিয়া তুলিয়াছে তাহা আমাদের বুদ্ধির অগম্য,—(অবশ্য লক্ষ লক্ষ বাহু-পেশীর সমবেত চেষ্টায়) তাহার পর, বিবিধ দেবতা ও দানবের মূর্তি খুদিয়া-খুদিয়া বাহির করা হইয়াছে। এই খিলান মণ্ডপগুলি প্রায়ই সমতল; প্রথম দৃষ্টিতে বুঝিতে পারা যায় না কেমন করিয়া উহারা ভারসাম্য রক্ষা করিয়া স্থিরভাবে দণ্ডায়মান আছে। এই খিলানমণ্ডপগুলি ৮১০ গজ লম্বা অখণ্ড প্রস্তরে নির্মিত, এবং দুই প্রান্তে ভর দিয়া রহিয়াছে, আমাদের সাদাসিধা কাঠফলকের মত এইরূপ কত অসংখ্য প্রস্তরখণ্ড পাশাপাশি অবস্থিত। এই সমস্ত,পুরাতন মিসরের ‘থেব’ ও ‘সেমৃফিস নগরের ধরণে নির্মিত; কালের দ্বারা বিনষ্ট হইবার নহে উহারা প্রায় অনন্তকালস্থায়ী। “শ্রী-রাগম"-মন্দিরের ন্যায়, এখানেও, আকাশে সতেজে পা ছুঁড়িতেছে এইরূপ অশ্বের মুর্তি কিংবা দেবতাদের মূর্তি সারি সারি রহিয়াছে এবং সুদূর আঁধারে ক্রমশ মিশিয়া গিয়াছে। এই সকল মুর্তির কৃষ্ণবর্ণ মসৃণ তলদেশ—যেখানে মানুষের হাত কিংবা শরীর পৌঁছায়—তাহা মনুষ্য ও পশুর দৈনিক গাত্র ঘর্ষণে ক্ষয় হইয়া গিয়াছে— এবং শুধু ইহাতেই উহাদের প্রাচীনত্ব সূচিত হয়। একদিকে বিরাট মহিমা, অপরদিকে গোময়-রাশি; একদিকে ইন্দ্রপুরীর বিলাস-বিভব, অপর দিকে বর্বরোচিত অযত্ন তাচ্ছিল্য। খাড়ার ও কাটা-কদলীপত্রের মালা—যাহা পূর্ব্বে কোন উৎসবের সময়ে টাঙ্গান হইয়াছিল, তাহা গুড়া