পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তাঞ্জোরের অদ্ভূত শৈল।
১৫৫

এই কর্মে নিযুক্ত,সেই চৰ্মাবরণে আচ্ছাদিত পুরাতন মাঝিমাল্লারা টস্ট করিয়া গা-বাহিয়া জল ঝরিতেছে, এই অবস্থায়,—জল হইতে উঠিয়া পাল্কীর নিকটে আসিয়া উপস্থিত হইল। বিষ্ণুদেবের রথারোহণের সহিত ইহার কত প্রভেদ; সেই রাগমে, রহস্যময় বিষ্ণুদেব-গভীর। রাত্রে, কত অবগুণ্ঠন-বস্ত্রে আবৃত হইয়া, তবে রথে উঠিয়াছিলেন। এইখানে আমি খুব কাছে আসিয়া দাড়াইলাম। উহারা তাহাতে কিছুমাত্র উদবেজিত হইল না—আমাকে দূরে যাইতেও অনুরোধ করিল না। পাল্কীর ঘেরাটোপ্ খোল ছিল; তাই, আজ এই প্রথমবার সেই সব বিগ্রহ দেখিতে পাইলাম—যাহাদিগকে কত শতাব্দী ধরিয়া এখানকার লোকে ভয় ও ভক্তি করিয়া আসিতেছে। * * *

 জমকাল গদীর উপর উপবিষ্ট এই বিগ্রহগুলিকে, যখন কতকগুলি নগ্নকায় বৃদ্ধ স্বীয় বলিরেখাঙ্কিত বাহুর উপর বসাইয়া লইয়া গেল, তখন আমার যেকি বিস্ময়—এমন কি, আতঙ্ক উপস্থিত হইয়াছিল—তাহা আর কি বলিব! কতকগুলি বিকটাকার পুত্তলিকা;—দেখিভে নরম-ততলে; গ্রীবাদেশ কাঁধের মধ্যে যেন ঢুকিয়া গিয়াছে; গোলাপী রঙ্গের ছোট ছোট মূর্ত্তি-কমলানের মত ট্যাবাটোবা। (কি জন্য গোলাপী রঙ্গ?—ভারতবাসীর রঙ্গ তাম্রাভ বলিয়াই কি?) ওষ্ঠাধর পাতলা; চক্ষু নিমীলিত ও পক্ষশূন্য;—দেখিলে মনে হয়, মনুষ্যের জ্বণ, * * * মৃতশিশু; এই চিরনিদ্রার অবস্থাতেও মুখের ভাব ভীষণ; কিন্তু এই ভীষণতার সঙ্গে একপ্রকার ভোগতৃপ্ত হৃষ্টপুষ্ট ভাব, প্রমত্ততার ভাবও প্রকটিত রহিয়াছে। মাশি রাশি রত্নমালা, হীরা চুণির অলঙ্কার, সূক্ষ্ম মুক্তার ঝালর-এই সমন্তের মধ্যে বিগ্রহগুলি নিমজ্জিত। বহুমূল্য কাণবালার ভারে ভারাক্রান্ত বড় বড় সোনার কাণ উহাদের মাথার দুই পাশে ঝুলিতেছে। উহাদের হাতের উপর খুব বড় বড় সোনার হাত বসানো,—তাহাতে লম্বা লম্বা নখ। আবার উহাদের জঘার শেষপ্রান্তে বড় বড় সোনার পা। এইরূপ একটা