পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তাঞ্জোরের অদ্ভূত শৈল।
১৫৭

পথ,—আলুলায়িত-কেশ-বটবৃক্ষ-শশাভিত পথ এইখানে আসিয়া মিলিত হইয়াছে, সেই পথগুলি,—নগর গ্রামাদি হইতে মানব-জনতার প্রবাহধারা, এই সরোবরের ধারে অজস্র ঢালিয়া দিতেছে।

 শিবপূজার জন্য এই লোকসমাগম। সরোবরের চারিধার মাথায় মাথায় আচ্ছন্ন। মাথাগুলা এত ঘেঁষাঘেসি যে, নদীতীরের উপল-রাশি বলিয়া মনে হয়। ভারতবাসীদের এই সরু সরু তমসাচ্ছন্ন মাথাগুলা, আমাদের য়ুরোপীয় মাথা অপেক্ষা অনেক ছোট। মনে হয়, এই সব মস্তকে গুহধর্ম্ম (Mysticism) ও জ্বলন্ত ইন্দ্রিয়পরতা ভিন্ন বুঝি আর কিছুরই জন্য স্থান নাই। (কথাটা বিরক্তিকর হইলেও বলিতে হইবে, এই দুই জিনিস প্রায় যুগলমূর্ত্তিতেই দেখা দেয়)। এই শিবের সোবরে আসিবার সময়, প্রত্যেকেই একএকটা সপল্লব খাগড়ার ডাল কাধে করিয়া লইয়া আইসে;—দেখিলে মনে হয়, যেন একটা তৃণের ক্ষেত আসিতেছে।

 রাত্রির প্রারম্ভেই, বৃহৎ মন্দির হইতে যে সকল হস্তী এখানে আসিয়াছে, তাহারা এই সব চিন্তাশীল-মস্তকরূপী কন্দুকরাশির মধ্যে—গণ্ডশৈলের ন্যায়, ক্ষুদ্র দ্বীপের ন্যায়, ইতস্ততঃ সমুখিত।

 এই পরী-নৌকার পার্শ্বে,–এই স্বর্ণমণ্ডিত ধ্বজচূড়া-সমন্বিত ভাসন্ত প্রাসাদের পার্শ্বে যেখানে অবিরাম মশাল জ্বলিতেছে-একটা তুমুল মানবজনতা, বাধোদ্যম-সহকারে, আসিয়া উপস্থিত হইল। উহারা, নৌকার গুণটানা রশি মাটির উপর লম্বাভাবে ছড়াইয়া রাখিল; এবং ভক্তদিগের মধ্য হইতে শত শত লোক আসিয়া, আনন্দধ্বনি করিতে করিতে, ঐ রশিটা ধরিল। এই দীর্ঘ প্রসারিত রঞ্জুর পার্শ্বে যাহারা দাড়াইবার স্থান পাইল না, তাহারা সকলের উপর জল ছিটাইয়া, সরোবরের উপর ঝাপাইয়া পড়িল। আ-কটি জলে নিমজ্জিত হইয়া উহারা পিছন হইতে পার্শ্ব হইতে নৌকাকে ঠেলিবে—অন্ততঃ নৌকার সঙ্গে সঙ্গে যাইবে।