পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৮
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ
১৫৮

  আবার ঘোর কোলাহল;—ঢাক ঢোল শানাইয়ের উন্মত্ত বাদ্যঘটা। এইবার নৌকা ছাড়িয়াছে। সরোবরের প্রস্তরময় কিনারা দিয়া নৌকা বেশ সহজে চলিতেছে। দেব ও দেবীর নৌকাযাত্রা এইবার আরম্ভ হইয়াছে। যে স্বর্গীয় শুকিরণ ঢালিয়া আজ রাত্রে চন্দ্রমা সকলকে বিমুগ্ধ করিতেছেন, তাহা অপেক্ষা শিবের এই উৎসব-আড়ম্বর শতগুণে পার্থিব, সন্দেহ নাই। সরোবরের তীরে, ঘণ্টিকাজাল সমাচ্ছন্ন শান্তশিষ্ট হস্তিগণ ঘণ্টাধ্বনি করিতে করিতে এই তুমুল জনতার সঙ্গে সঙ্গে চলিয়াছে, এবং তাহাদের গুরুপদভারে পাছে কোনও শিশু বিদলিত হয়, এই জন্য। ধীরে ধীরে অতি সাবধানে পদক্ষেপ করিতেছে।


মীনাক্ষী-দেবীর রত্নভাণ্ডার।

 আজ আমি প্রত্যুষে সূর্যোদয় হইবামাত্রই (১) দেবালয়ে উপস্থিত হইলাম। এই প্রস্তরময় গোলোকধাধার প্রবেশপথগুলিতে ইহারই মধ্যে ভাতিক জীবন-উদ্যমের স্ফক্তি দেখা যাইতেছে। প্রবেশ-বীথীর ধারে ধারে, সমস্ত প্রস্তর-মঞ্চের ভীষণদর্শন প্রতিমা-সমূহের মধ্যবর্তী সমস্ত কুলঙ্গির মধ্যে, ফুলের দোকানীরা কাজে বসিয়া গিয়াছে; গাঁদা ফুলের মালা গাঁথিতেছে, তাহার সহিত গোলাপ ফুল ও স্বর্ণসূত্র সংমিশ্রিত করিতেছে। অর্ধনগ্ন লোকেরা যাতায়াত করিতেছে; সদ্যস্নাত ব্যক্তির আর্জ কেশ হইতে জল ঝরিয়া পড়িতেছে, তাহাদের চক্ষে ধ্যানের ভাব, ভক্তির ভাব। পবিত্র হস্তী, পবিত্র গাভী,—যাহারা তমসাচ্ছন্ন মন্দিরের কুটিমতলে বাস করে; পক্ষীগণ, যাহারা রক্তিম মন্দির-চুড়ার বিভিন্ন উচ্চ-অংশে নীড় বাঁধিয়া আছে, সকলেই এই প্রভাত-আলোকে চঞ্চল হইয়া উঠিয়াছে, ক্রীড়া করিতেছে;—পশুপক্ষীর মধ্যে কেহ হরব, কেহ বা বৃংহিত, কেহ বা কুজন কেহ বা গান করিতেছে।