পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তাঞ্জোরের অদ্ভূত শৈল।
১৫৯

 পূর্ব্বের কথামত পুরোহিতেরা আমার জন্য অপেক্ষা করিতেছিলেন। তাহারা আমাকে অন্ধকারময় মন্দিরের গভীরদেশে লইয়া গেলেন।, আমার সম্মুখে, একটা গুরুভার তাম্র-দ্বার উদঘাটিত হইল; উহাই মন্দিরের গুপ্ত অংশ।

 প্রথমে একটা দালান, তাহার দুই ধারে সারি সারি কৃষ্ণবর্ণ দেবমুত্তি, গুহাগহবরের মত সমস্ত অন্ধকারে আচ্ছন্ন,—তাহার পরেই বিমল আলোকচ্ছটা, “স্বর্ণপদ্ম-সরোবর” নামে একটি পবিত্র পুষ্করিণী;মুক্ত আকাশতলে, একটি চতুষ্কোণ গভীর জলাশয়; নামিবার জন্য, চারিধারে পাথরের সিঁড়ি; জলাশয়ের চারিদিকে, শোভন-সুন্দর স্তম্ভশ্রেণী চলিয়া গিয়াছে; কতকগুলি খিলান-মণ্ডপ খোদাই-কাজকরা ও কতকগুলি খিলান-মণ্ডপ পবিত্র গম্ভীর বর্ণে রঞ্জিত; আর সারি সারি ঢাকা-বারাণ্ডা; এই বারাণ্ডাগুলি, ব্রাহ্মণদিগের গুপ্ত বিচরণভূমি। এই বদ্ধ ঘেরের একটা দিক, সুশীতল নীল ছায়ায় এখনও পরিস্নাত; অন্য দিক্‌, সূর্যের উদয়ে ইহারই মধ্যে পাটল-রাগে,—ভাতিক সিন্দুররাগে রঞ্জিত হইয়াছে। এই সরোবরের চতুদ্দিকস্থ সারি সারি বারাণ্ডাদালানের মাথা ছাড়াইয়া, উর্ধে রক্তিম মন্দির-চূড়াগুলি; সকল স্থান হইতেই এই চূড়াগুলি দেখা যাইতেছে; এই চূড়াগুলি বিভিন্ন ব্যবধানে ও বিভিন্ন উচ্চতায় অবস্থিত হইয়া দীপ্তি পাইতেছে এবং প্রত্যেক চূড়ার চারিধারে পাখীরা ঝাকে ঝাকে উড়িয়া বেড়াইতেছে; আর একটি সোনার গম্বুজও ঝিকমিক্ করিতেছে মন্দিরের যে স্থানটি সর্ব্বাপেক্ষা পবিত্র ও সর্ব্বপেক্ষা রহস্যময়, যেখানে আমি কোনো উপায়েই প্রবেশলাভ করিতে পারি নাই—সেই গম্বুজটি তাহারই মাথায় অধিষ্ঠিত। অপূর্ব্ব সরোবর! নিষ্পতা যেন মুর্তিমতী! তীরস্থ কঠোর ও বিরাট দৃশ্যের মধ্যে এই সরোবরের জল যেন মৃত বলিয়া মনে হয়—উহাতে একটি রেখামাত্র নাই। চতুর্দিকের স্তম্ভশ্রেণী, জলের উপর প্রতিবিম্বিত, দ্বিগুণিত, দীর্ঘীকৃত ও বিপর্যস্ত ভাবে দেখা যাইতেছে। এই “স্বর্ণপদ্ম-সবোবর",—এই তপন-তারা জলদরাজির