পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬২
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

ইহাদের প্রধান আড্ডা; রক্ষিগণ চীৎকার করিয়া, ঠেলাঠেলি করিয়া, উহাদিগকে সরাইয়া দিতেছে। কেন না, ভিক্ষুকেরা কৌতূহলাকৃষ্ট হইয়া একপ্রকার বেড়ার চারিধারে ক্রমাগত ঠেলিয়া আসিতেছে; দুই দিক্কার দুইটা পিপায় দুইগাছা রসি বাধিয়া এই বেড়াটি সংরচিত।

 আমার প্রবেশের জন্য টানা রসির কিয়দংশ শিথিল করিয়া ভূমিতে নামাইয়া দেওয়া হইল, তাহার পর পূর্ব্ব্বের মত আবার সটানে বাধা হইল; আমি পুরোহিতদের সহিত রঞ্জু-চক্রের মধ্যে প্রবেশ করিলাম। আমার সম্মুখে একটা বৃহৎ টেবিল কালো গালিচায় ঢাকা;—তাহারই উপর দেবীর অলঙ্কারগুলি স্তূপাকার। এই রাশীকৃত স্বর্ণ ও রত্নময় অলঙ্কারের নিকটে, উহারা আমাকে একটা কারান-কেদারায় বসাইল; আমার গলাল গেঁ ফুলের মালা পরাইয়া দিল; তাহার পর, পুরোহিতেরা আমার হস্তে অলঙ্কার গুলি দিতে আরম্ভ করিলেন; এই অফারগুলি কোন গভীরতম গুপ্ত কক্ষ হইতে ঘণ্টাখানেকের জণ্ঠ বাহির করা হইয়াছে; তাহারা আমার হাতে অলঙ্কারগুলি স্পর্শ করাইতে লাগিলেন; এবং আমোদ করিয়া একটার পর একটা আমার জানুর উপর নিক্ষেপ করিতে লাগিলেন। বিবিধ বর্ণের মণিরত্নে খচিত ডজণ্ডজ ভারী ওজনের সোনার মুকুট। অজাগর সর্পের ন্যায়, মাণিক ও মুক্তার পাকানো হার, সহস্র বৎসরের পুরাতন বলয়। পুরাতন কণ্ঠনালাগুলা এত ভারী যে এক হাতে উঠানো কঠিন। রমণীর কূপ হইতে জল তুলিবার জন্য যে সব কলস ব্যবহার করে সেইরূপ বড় বড় কলস,—কিন্তু উহা পালা সোনার, এবং হাতুড়ী পিটিয়া গঠিত। বক্ষদেশ বিভূষিত করিবার জন্য নীলরঙ্গের একটি অতুলনীয় কবচ-বাদামের মত বড় বড় মণীকৃত নীলকান্তমণি দিয়া বিরচিত। যে সময় তাহারা এই সব অপূর্ব্ব র-ঐশ্বর্যে আমার হাত ভরিয়া দিতেছিলেন, সেই সময়ে দূর হইতে “সঙ্গীতলহরী আমার কাণে আসিয়া পৌছিতেছিল -ঢাকঢলের ঘোর গর্জ্জন, পবিত্র শঙ্খ ও শানাইয়ের বিলাপ-ধ্বনি। মধ্যে