পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তাঞ্জোরের অদ্ভুত শৈল।
১৬৩

মধ্যে আমার পশ্চাতে ঘোর কোলাহল; ক্ষুধাতুর ভিক্ষুকদিগকে রক্ষিগণ তাড়াইতেছে; ভিক্ষুকেরা এতদূর ঠেলিয়া আসিয়াছে যে ভঙ্গুর দড়ির বেড়াটা ভাঙ্গিবার উপক্রম হইয়াছে। আবার এই দেখ, হীরকখচিত কতকগুলা ঘোড়ার রেকাব,—নিশ্চয়ই দেবীর অশ্ব-বাহনের জন্য গঠিত। এই দেখ কতকগুলা সোনার কৃত্রিম কাণ, তাহাতে সূক্ষ্ম মুক্তাগুচ্ছ। উৎসবযাত্রাকালে দেবীর জ্বণাকার ক্ষুদ্র গোলাপীমস্তকের দুই পাশে উহা আটকাইয়া দেওয়া হয়। এই দেখ, কতকগুলা সোনার কৃত্রিম হাত ও কৃত্রিম পা; দেবী যখনই ভ্রমণার্থ মন্দির হইতে বাহির হয়েন, তখনই উহা তাহার জ্বণ-প্রায় ক্ষুদ্র হস্তপদের প্রান্তদেশে বাধিয়া দেওয়া হয়•••

 এই রভারাক্রান্ত টেবিলের রত্ন-ঐশ্বর্য্য যখন সমস্তই দেখা হইয়া গেল, আমি মনে করিলাম এই বুঝি শেষ। কিন্তু না; ভীষণ মুর্তিসমূহে পরিপূর্ণ, কৃষ্ণবর্ণ বারাণ্ডাগুলার মধ্যদিয়া পুরোহিতেরা আমাকে একটা অঙ্গনে লইয়া গেলেন; সেখান হইতে তুরীনাদের মত ঘোর তীব্র শব্দ নিঃসৃত হইতেছিল; সেখানে লাল পোষাকে আচ্ছাদিত ছয়টা হস্তী, রদ্দরে দাড়াইয়া আমার জন্য অপেক্ষা করিতেছিল; আমি আসিবানাই, তাহাদের বৃহৎ ও স্বচ্ছ কর্ণরূপ তালপত্রের বীজনে ক্ষান্ত না হইয়া, আমার সম্মুখে নতজানু হইল। আমি প্রত্যেককে রৌপ্যমুদ্রা দিলাম; উহারা অতি সূক্ষ্ম ক্ষুদ্র চক্ষু দিয়া নিরীক্ষণ করিতেছিল এবং মুদ্রাটি উঠাইয়া লইয়াই, কতকগুলা বৃহৎ চামড়ার ‘কূপোর মত’ নড় বড় করিতে করিতে চলিয়া গেল; আপনার খেয়াল-অনুসারে যেখানে খুসি চলিয়া গেল;—কেহ বা সঁড়ি বারাণ্ডাপথে, কেহ বা মন্দিরের কুট্টিমতলে; এই মন্দিরের মধ্যে উহারা মুক্তভাবে বিচরণ করে।

 তাহার পর, উহারা আমাকে মন্দিরের দালানে লইয়া গেল; উহার ছাদ-আদি প্রকাণ্ড প্রকাও পাথরের চালায় গঠিত; দেখিলে মনে হয়, অতিকায় দৈত্যদিগের গুহাভবন; যে সকল ভৃত্য আমাদের সঙ্গে ছিল,