পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সিংহলে।
১৩

সেই সমস্ত, একালের বৌদ্ধেরা, অবিনশ্বর দাগোবার চারিধার হইতে ভক্তিভাবে সযত্নে কুড়াইয়া রাখিয়াছে। উহারা ভগ্ন-মন্দিরের সোপান-ধাপের দুইধারে পুরাতন দেবতাদিগের ভগ্ন প্রতিমাগুলি সারি-সারি সাজাইয়া রাখিয়াছে। এক্ষণে পুরাতন যজ্ঞবেদিকাগুলি বিলুপ্তমুখশ্রী ও অঙ্গহীন হইলেও, তাহাদেরই যত্নে কোন প্রকারে ভূমির উপর খাড়া রহিয়াছে। এখনও ভক্ত বৌদ্ধেরা, ভক্তিসহকারে প্রতিদিন প্রাতে এই বেদীগুলি সুন্দর ফুল দিয়া সজ্জিত করে, এবং তাহার উপর ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র পূজা-প্রদীপ জ্বালাইয়া রাখে। তাহাদিগের চক্ষে অনুরাধপুর পুণ্যতীর্থ; অনেক দূর হইতে যাত্রিগণ এখানে আসিয়া সমবেত হয়, এৱং শান্তিময় তরু-ছায়াতলে বাস করিয়া পূজা অর্চনা করে।

 গুরুভার প্রস্তর-ফলক:সমূহ সারি সারি পড়িয়া রহিয়াছে; মন্দিরচূড়া হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া স্তম্ভশ্রেণীগুলি ক্রমশঃ বনের মধ্যে মিলাইয়া গিয়াছে;এই সমস্ত নিদর্শনের দ্বারা সুবৃহৎ ভজনা-শালার আয়তন ও রচনা-প্রণালী কতকটা অনুমান করা যায়। অসংখ্য বহির্দালান পার হইয়া তবে সেই ভজনা-শালায় উপনীত হওয়া যায়। যক্ষ রক্ষ গন্ধর্ব্ব প্রভৃতি নিকৃষ্ট দেবতারা ঐ দালানগুলির রক্ষিরূপে অবস্থিত। দেবতাদের এই পাষাণপ্রতিমা গুলি চূর্ণবিচূর্ণ হইয়া ভূতলে পড়িয়া রহিয়াছে। ইহা ছাড়া, আরও শত শত ভগ্ন-চূর্ণ মন্দির ও প্রাসাদের চিহ্ন সর্ব্বত্রই দৃষ্ট হয়। বৃক্ষকাণ্ডের সহিত অসংখ্য প্রস্তর-স্তম্ভ এই অরণ্য-গর্ভে নিহিত; এবং সকলে মিলিয়া এক সঙ্গে আবার সেই অনন্ত অসীম হরিৎ-রাজ্যে মিলাইয়া গিয়াছে।

 অস্মৎ-যুগের প্রারম্ভে, রাজকুমারী—“সঙ্ঘমিত্তা, যিনি একজন মহাযোগিনী ছিলেন—তিনি মহাবোধি-বৃক্ষের একটি শাখা—যাহার তলায় বসিয়া বুদ্ধদেব বৌদ্ধত্ব প্রাপ্ত হন ভারতের উত্তর-খণ্ড হইতে আনাইয়া এইখানে রোপণ করিয়াছিলেন। সেই শাখাটি এক্ষণে একটি প্রকাণ্ড