পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পণ্ডিচেরীতে।
১৬৭

করিতেছে, একদিকে তিন পা চলিলেই দণ্ডটা কুপের অভিমুখে লুইয়া পড়িতেছে এবং মসকটাও নিমজ্জিত হইতেছে; আবার উল্টা দিকে তিন পা চলিলেই দণ্ডটা এবং সেই সঙ্গে মসকটাও উঠিয়া পড়িতেছে, এইরূপ ক্রমান্বয়ে প্রভাত হইতে সন্ধ্যা পর্য্যন্ত, অবিরাম উহাদের গান চলিয়াছে।

 যতই অগ্রসর হইতেছি, শুষ্কতা ততই কষ্টকর হইয়া উঠিতেছে। একটু পরেই দেখিলাম, কতকগুলা গাছ যেন আগুনে পুড়িয়া গিয়াছে, পাতাগুলা কুঁকড়িয়া গিয়াছে, এবং গাছের গায়ে লাল ধূলাব যেন একটা পুরু পোঁচ পড়িয়াছে। দক্ষিণ প্রদেশে কেবল কীর্তিমদির গুলাই এই লাল ধুলায় রঞ্জিত হয়, কিন্তু এখানে গাছপালাও রঞ্জিত রহিয়াছে। এখানে ভূমি যেমন তৃষাতুর, আকাশ যেরূপ নিবৃষ্টি, তাহাতে মানুষের ক্ষুদ্র চেষ্টায় আর কি হইবে? মসকগুলা ক্রমেই কূপের গভীর দেশে তলাইতেছে, এবং শুষ্ক তলদেশে জল না পাইয়া উঠিয়া পড়িতেছে। আসন্ন ভীষণ দুর্ভিক্ষের পূর্ব্বসূচনা ও বাস্তবতা ক্রমেই উপলব্ধি হইতেছে। ভারতে আসিবার পূর্ব্বে, এইরূপ উৎপাৎ প্রাগৈহিতাসিক বলিয়াই মনে করিতাম। আমাদের এই বেল-পথ ও বাষ্পীয় পোতের যুগে, খাদ্যের আমদানির অভাবে, লোকেরা অনাহারে মরিবে —ইহা দয়াধর্ম্মের বিচারে নিতান্তই অমার্জনীয়।


পণ্ডিচেরীতে।

 আমাদের পুবাতন ক্ষুদ্র ম্রিয়মান উপনিবেশ নগর পণ্ডিচেরীর যতই নিকটবর্তী হইতেছি ততই নারিকেল তালবৃক্ষাদি আবার দেখা দিতেছে। ইহার চতুর্দিকস্থ প্রদেশ এখনও সর্ব্বগ্রাসী শুষ্কতার কবলে পতিত হয় নাই; এই প্রদেশটি যেন একপ্রকার মরুকানন বলিয়া মনে হয়; এখনও ইহা নদীর জলে—বৃষ্টির জলে পরিষিক্ত; এখনও দক্ষিণ প্রদেশের সুন্দর হরিৎক্ষেত্র মনে করাইয়া দেয়।