পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পণ্ডিচেরীতে।
১৬৯

 পণ্ডিচেরীর মধ্যস্থলে, একটা বৃহৎ চত্ত্বর, ময়দানের মত প্রসারিত, সর্ব্বদাই জনশূন্য, তৃণাক্রান্ত, এবং তাহার মাঝখানে একপ্রকার শোভাফোয়ারা; বোধ হয় ইহা একশ বৎসরেরও পুরাতন নহে, কিন্তু সর্ব্বধ্বংসী সূর্যের প্রখর উত্তাপে জরাজীর্ণ বার্ধক্যের ভাব ধারণ করিয়াছে; উহাকে দেখিলে, কে জানে কেন, মনে এক প্রকার বিষাদের ভাব উপস্থিত হয়।

 “গোরা সহরের” পরেই দেশী সহর। এই দেশী সহর খুব বড়, জীবন উদ্যমে পূর্ণ, তাছাড়া খুব হিন্দুভাবাপন্ন;—বাজার আছে, তালকুঞ্জ আছে, দেবালয় আছে।

 এখানকার ভাবতবাসীরা ফরাসী, আমাদের ফ্রানসের লোক,—অন্তত এই কথা আবৃত্তি করিতে উহারা ভালবাসে। এখানকার একটি ক্লব— নিছক্ ভারতবাসীদের ক্লব—আমাকে যেরূপ আগ্রহের সহিত আদর অভ্যর্থনা করিয়াছিল তাহা আমি বাক্যের দ্বারা প্রকাশ করিতে পারি না উহা বড়ই মর্মস্পর্শী। উহারা নিজের চেষ্টা ও যত্নে এই ক্লবটি স্থাপন করে। যাহাতে আমাদের মাসিক পত্রিকা, আমাদের পুস্তকাদি পাঠ করিবার সুবিধা হয় এই উদ্দেশেই ক্লবটি স্থাপিত।

 আমাদের ভাষাকে আরও দেশব্যাপ্ত করিবার জন্য, উহারা এই ক্লবের সঙ্গে একটা বিদ্যালয়ও যুড়িয়া দিয়াছে। যে সকল ছোট ছোট ছাত্রগুলিকে উহারা আমার সমক্ষে আনিল, উহারা কি সৌম্য সুন্দর! আট বৎসরের বালক, সূক্ষাবয়ব শ্যামল মুখমণ্ডল, কেমন ভদ্র, কেমন শিষ্ট, ছোট ছোট ক্ষুদে রাজার মত, উহাদের জরির পাড়ওয়ালা মখমলের পরিচ্ছদ। উহারা বিবিধ সমস্যা ও ফরাসীদের কর্তব্য সকল যেরূপ স্পষ্ট করিয়া বিবৃত করিল তাহা আমাদের নিম্ন পাঠশালার অধিকাংশ ছাত্রের পক্ষে দুরূহ।


বাই-নাচ।

 দীর্ঘায়াত নেত্র বিশিষ্ট, রং-করা একটি তরুণ মুখ, ইন্দ্রিয়াসক্তি-পরিব্যঞ্জক মুখ,—তিমির-রাজ্যের মুখ—খুব লঘুভাবে, তাড়াতাড়ি একবার