পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পণ্ডিচেরীতে।
১৭১

বাহুযুগলকে ভুজঙ্গ-গতির অনুকরণে কত রকম করিয়া বাকাইতেছে...কিন্তু না, সর্ব্বাগ্রে উহার চোখের দৃষ্টি আমার চোখের অন্তস্তল পর্য্যন্ত এমন ভাবে ভেদ করিতেছে যে আমার সর্ব্বাঙ্গ শিহরিয়া উঠিতেছে; ঐ চোখে নানা প্রকার ভাব খেলিতেছে—কখন পরিহাসের ভাব, কখনও স্নিগ্ধ কোমল প্রেমের ভাব...উহার মণিরত্নখচিত শিরোভূষণের, ও কর্ণনাসিকার অলঙ্কারের এরূপ উজ্জ্বলতা এবং ঐ উজ্জ্বল সোনার সি থিটি এমন পরিপাটিরূপে উহার মুখটি বেড়িয়া আছে, যে তাহাতে ঐ সুন্দর শ্যামল মুখখানিতে কি জানি কি একটা অস্পষ্ট দূরত্বের ভাব আসিয়া পড়িয়াছে—আমাকে স্পর্শ করিলেও যেন সে দুরত্ব ঘুচিবার নহে।

 সে যাইতেছে, আবার আসিতেছে; নর্তকী বিশেষ করিয়া আমার জন্যই নাচিতেছে। উহার নৃত্যে লেশমাত্র শব্দ নাই। গালিচার উপর কেবল উহার পায়ের মৃদুমধুর নুপুরধ্বনি শুনা যাইতেছে। উহার ছোট ছোট পা-দুখানির আঙ্গুলগুলি ছড়ানো, আংটীর দ্বারা ভারাক্রান্ত; গালিচার উপরে পা-দুখানি তালে-তালে ফেলিতেছে; এবং পায়ের আঙ্গুলগুলাও হাতের মত কেমন সহজভাবে নাড়িতেছে।

 ফুলের গন্ধে এখানকার বাতাস এমন পরিষিক্ত যে নিশ্বাস রুদ্ধ হইয়া যায়। এখানকার হিন্দুরা, হিন্দু-ফরাসীরা—আমার জন্য এই উৎসবের আয়োজন করিয়াছে, এবং উহাদের মধ্যে যিনি সর্ব্বাপেক্ষা ধনবান্, আমি নিমন্ত্রিত হইয়া তাহারই বাড়ীতে আসিয়াছি। আমি আসিবামাত্র গৃহস্বামী আমার গলায় কয়েক ছড়া জুই ফুলের মালা পরাইয়া দিলেন; সৌরভে ঘর ভরিয়া গেল—আমার যেন একটু নেশার: ঘোর লাগিল; লম্বা-গলাবিশিষ্ট একটা রূপার গোলাবদান হইতে খানিকটা গোলাপ জলও আমার উপর ছিটাইয়া দেওয়া হইল। গরমে হাঁপাইয়া উঠিতেছি। যে সকল নিমন্ত্রিত লোক বসিয়া আছে- (অধিকাংশই জরির পাড়ওয়ালা-পাগড়ীপর শ্যামবর্ণ লোক) দণ্ডায়মান নগ্নকায় ভৃত্যেরা তাহাদের মাথার উপর,