পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পণ্ডিচেরীতে।
১৭৫

এগিয়া আসিয়াছে, ঝুঁকিয়া রহিয়াছে; উহারা মাথায় উচু, নর্তকী ক্ষুদ্রকায়; উহারাই যেন নর্তকীর প্রভু; উহাদেরই প্রভাবে যেন উহার ভাবিহইতেছে, উহারাই উহার মনকে অধিকার করিয়া রহিয়াছে; —যেন একটা উজ্জ্বল লঘুকায় প্রজাপতির উপর কুঁ-দিয়া নিজের খেয়াল-অনুসারে উহাকে যেখানে সেখানে চালাইয়া লইয়া বেড়াইতেছে। উহার মধ্যে, কি জানি কেমন একটা বিকৃতভাব—কেমন একটা কুটিল নষ্টামির ভাব পরিলক্ষিত হয়।

 বদিকদলের পাশে, আরও দুই তিনটি নর্ত্তকী রহিয়াছে,—উহারই এত বেশভূষায় সুসজ্জিত। উহারা প্রথমেই নাচিয়াছে। উহার মধ্যে একজনকে আমার ভারী অদ্ভূত বলিয়া ঠেকিয়াছিল; যেন একপ্রকার বিষাক্ত সুন্দর ফুল, পাতলা ও লম্বা; মুখটা সরু; একেই ত বড় বড় টানা চোখ, তাতে আবার সুর্মা দেওয়ায় আর ও বেপরিমাণ দীর্ঘ হইয়াছে; চুল খুব কালো, দুই গালের উপর দিয়া, খুব ‘পেটে-পাড়ানো ভাবে ফিতার মত নামিয়াছে; শুধু কালো পরিচ্ছদ, কালো শাড়ী, সরু জরির পাড়ওয়ালা একটা কালো ওড়না; অলঙ্কারের মধ্যে শুধু মাণিকের অলঙ্কার; হাতে মাণিক, বাহুতে মাণিক; এবং একগুচ্ছ মাণিক নাসিকা হইতে লম্বিত হইয়া ওষ্ঠের উপর ঝুলিয়া পড়িয়াছে, মনে হইতেছে যেন রক্তপায়ী রাক্ষসীব মুখে এখনও রক্তের দাগ লাগিয়া রহিয়াছে।

 কিন্তু এখন আবার সেই স্বর্ণভূষণা নর্ত্তকী—সেই নর্ত্তকীবৃন্দের রাণী, নর্ত্তকীদের উজ্জ্বল তারা,—বাদকদল পরিবেষ্টিত হইয়া আবার সহসা আবির্ভূত হইল, তথন উহাদের স্মৃতি, আমার মন হইতে একেবারেই অন্তহিত হইল। শেষ নৃত্যের জন্য উহাকেই রাখা হইয়াছিল।

 এই নর্র্ত্তকী অনেকক্ষণ ধরিয়া নৃত্য করিল; যদিও এই নৃত্যে আমার ক্লান্তিবোধ হইতেছিল, তবুও সেই সঙ্গে ভয়ও হইতেছিল, কোন্ মুহূর্ত্তে না জানি তাহার নৃত্যের অবসান হইবে, আমি তাহাকে আর দেখিতে পাইব না।