পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পণ্ডিচেরী ছাড়িয়া।
১৭৭

যেন পণ্ডিচেরীতে দ্বিতীয়বার আসিয়াছি, যেন আমার মনে পণ্ডিচেরীর পূর্ব্বস্মৃতি জাগিয়া উঠিয়াছে। আমার প্রথম যৌবনে, সেনেগালের সেই নিৰ্বাপিত পুরাতন নগর Saint-Louisতে একবৎত্র বাস করিয়া, প্রস্থানের সময় আমার মনে যেরূপ ভাব হইয়াছিল, এখান হইতে যাইবার সময়েও কতকটা সেইরূপ ভাব উপস্থিত হইয়াছে।

 আমি এখানে আসিয়া একটা হোটেলে ছিলাম। পণ্ডিচেরীতে দুইটা হোটেল আছে; কিন্তু পর্যটক আগন্তুকের অভাবে, দুইটা হোটেলই কোনপ্রকারে কষ্টেসৃষ্টে চলে। যে হোটেলটা সমুদ্রের ধাবে অবস্থিত আমি সেই হোটেলটা বাছিয়া লইয়াছিলাম। হোটলের বাড়ীটা একটু সেকেলে রাজ-রাজড়ার বাড়ীর মত, নগরের গোড়াপত্তন হইতে উহার নির্ম্মাণকাল ধরা যাইতে পারে; উহার জরাজীর্ণতা চূণকামে ঢাকা পড়িয়াছে। উহার ভগ্নদশা দেখিয়া, পোডোভাব দেখিয়া, আমি একটু ভয়ে ভয়ে প্রবেশ করিয়াছিলাম। তখন কে বলিতে পারিত, যদৃচ্ছাল এই প্রবাস-গৃহটির উপর আমার আসক্তি জন্মিবে? আমি একটা বড় কার। অধিকার করিয়া ছিলাম, বয়ঃপ্রভাবে কাম্রাটা একটু বাঁকিয়া গিয়াছে, চূণকামে ধব ধব, করিতেছে এবং ভিতরটা প্রায় খালি। আফ্রিকার উপকূলে যে বাড়ীটিতে আমি অনেকদিন বাস করিয়াছিলাম, তাহার সহিত উহার কি-যেন একটা অনিৰ্দেশ্য ও ঘনিষ্টতর সাদৃশ্য আছে। সবুজ খড়খড়িওয়ালা জাল্লা হইতে ভারতের অসীম সমুদ্র দেখা যায়; দিনের যে সময়টা অত্যন্ত কষ্টজনক সেই সময়ে বহিঃসমুদ্রের স্নিগ্ধ বায়ু আদর্শশৈত বহন করিয়া আনে। ফিরিঙ্গিদের ঘরে যেরূপ থাকে, সেইরূপ আমার ঘরে, শত বর্ষের পুরাতন কতকগুলা কাঠের আরাম-কেদারা ছিল; কেদারার কিনারায় খোদাই-কাজ। ঘোড়শ লুইর আমলের একটা দেয়াল-ঘেঁসা অর্ধ-টেবিলের উপর সেই সময়কার একটা ঘড়ি ছিল। তাহার টিক্ টিক্ শব্দে জানা যায় তাহার জরাগ্রস্ত ক্ষুদ্রপ্রাণটা এখনও একটু