পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হৈদরাবাদে।
১৮৩

এবং পাগড়ির আঁচলটা, পিছনদিকে, পরিচ্ছদের উপর ঝুলিয়া 'পড়িয়াছে।

 কিঞ্চিৎ-কিঞ্চিৎ ব্যবধানে স্থাপিত রাজপথের বিজয়তেরণগুলা গৃহসমূহের মাথা ছাড়াইয়া উঠিয়াছে। তোরণের উপরে সোনালি-"অর্ধচন্দ্র"সমন্বিত মজিদি ধরণের ধ্বজচূড়া (Minaret)। কোথাও বা, এই তোরণের সহিত-রেশমমণ্ডিত ও বংশনির্ম্মিত লঘুধরণের দ্বারপ্রকোষ্ঠ সংযোজিত; নিজামের স্বাগত-অভ্যর্থনার জন্য এই সমস্ত স্থাপিত হইয়াছে। নগরের মধ্যস্থলে – রাজপথসমূহের কেন্দ্রদেশে,—চৌমাথা রাস্তার উপর, একটা প্রকাণ্ড “চারমুখো” তোরণ,—যাহার ধ্বজচূড়া সহরের সমস্ত ধ্বজচূড়া ছাড়াইয়া, মজিদের শীর্ণকায় ধ্বজচূড়া ছাড়াইয়া, হৈদরাবাদের শুভ্র ধূলারাশি ছাড়াইয়া, সুনির্মল ধ্রুব আকাশে একেবারে সিধা উঠিয়াছে।

 সাদাসিধা ছুচাল-মুখ আরবী-খিলাগুলা ভারতে আসিয়া একটু জটিলভাব ধারণ করিয়াছে,এখন উহাতে কোথাও বা ফুলমালার কাজ -কোথাও বা খাঁজকাটা কাজ দৃষ্ট হয়। ভারতীয় শিল্পীরা মূল আদর্শের নকে শ্রীসম্পদে আরো যেন সমৃদ্ধিশালী করিয়া তুলিয়াছে। প্রত্যেক গৃহের প্রথম-তলে কত যে বিচিত্রধরণের ছোট-ছোট খিলান সারি-সারি চলিয়াছে, তাহার আর অন্ত নাই। খিলানগুলা খুব চুচাল অথবা খুব “থ্যাবড়া"-ধরণের; কোনোটা গোলাপ-পাপড়ির আকারে, কোনোটা বা ত্রিপত্র কিংবা বহুপত্র তৃণের আকারে গঠিত। বরাবর রাস্তার ধারেধারে, খোলা বারণ্ডার নীচে, দোকানদারেরা গদি ও গালিচার উপর উপবিষ্ট। দোকানের পশ্চাদ্ভাগে, প্রাচীরের গায়ে বাহিরখিলানের অনুকরণে খিলানের একটা নক্সা কাটা-সবুজ, নীল কিংবা সোনালি রঙে রঞ্জিত; এবং উহাতে প্রায়ই ময়ূরাদির ন্যায় কোন বৃহৎ পক্ষীর বিস্তারিত পুচ্ছের অনুকৃতি দৃষ্ট হয়। ভিন্ন ভিন্ন পণ্যদ্রব্যের ভিন্ন ভিন্ন বিভাগ। কোথও রত্নাদির অলঙ্কার, কোথাও মুক্তার কণ্ঠহার, কোথাও বা বলয়াদি