পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৪
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

বিক্রীত হইতেছে। সকল দোকানেই,—বহুমূল্য রত্নাদির পার্শ্বে কাচের জিনিষ, এবং খাঁটি সোনার পার্শ্বে ঝুটা চুমকির জিনিষ ঝিকৃমি করিতেছে। সুগন্ধিদ্রব্যের দোকানে-পুরাতন চীনের বুয়েমের মধ্যে বিবিধ ফুলের আতর সংরক্ষিত। একটা দোকানে চুমকি বসানো, জরির কাজকরা ঝকমকে তুর্কিচটিজুতা রহিয়াছে। গণ্ডোলা নৌকার মুখের মত উহাদের অগ্রভাগ উপরদিকে বাকানো। মধ্যে মধ্যে ফুলের দোকান; ছিন্নবৃন্ত গোলাপফুল ছোট-ছোট পাহাড়ের মত স্তুপাকারে সজ্জিত; বালকেরা জুইফুলের রাশীকৃত স্তুপ হইতে ফুল উঠাইয়া-লইয়া মুক্তা গাঁথিবার মত মালা গাথিতেছে। কোথাও বা অস্ত্রাদি বিক্রীত হইতেছে;— বর্শা, দুই হাতে ধরিবার বড়-বড় তলোয়ার, একটা বিশেষ-আকারের বাঘ-মারা ছোৱা। যখন ৰাণ মুখব্যাদান করিয়া মানুষকে আক্রমণ করে, তখন এই ছোরা তাহার গলার বসাইয়া দেওয়া হয়। কোথাও বা বুটাজরির বরের পোষাক,চুমকি-বসনে বর-কনের টোপর বিক্রীত হইতেছে। আর এক স্থানে, (গৃহদির সম্মুখে, খানিকটা “পদ-পপ জুড়িয়া) কতকগুলি লোক মিহি কাপড়ের উপর নক্সা ছাপিতেছে। এই কাপড়গুলা বাষ্পবৎ স্বচ্ছ; 5াল, সবুজ কিংবা হলদে জমির উপর,—রূপালি কিংবা * সোনালি রঙের ছোট-ছোট নক্সা; এই নক্সাগুলি আদৌ স্থায়ী নহে; একফোঁটা বৃষ্টির জলে সমস্তই ধুইয়া যায়। কিন্তু উহার বর্ণবিন্যাস অতি চমৎকার; এই সকল কাপড় অতি “খেলো” হইলেও, এখন এই মুক্তবায়ুসেবী শিল্পীদিগের হস্ত হইতে বাহির হইয়া আইসে, তখন যেন উহা কোন পরীর মোহন অবগুণ্ঠন বলিয়া মনে হয়। সোনা, সোনা, এখানে সর্ব্বত্রই সোনা; অথবা তাহার অভাবে ঝুটা-জরি, সোনালি পাত—এমন কোন কিছু —যাহা দাপ্ত ভানুর উজ্জ্বল কিরণে ঝিকমিক করে, কিংবা কুতূহলী দর্শকের নেত্ররঞ্জন করে।

 এখানকার ধূলা শুভ্র, গৃহগুলি শুভ্র এবং লোকের পরিচ্ছদ রুদ্র।