পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হৈদরাবাদে।
১৮৫

তুষারবৎ শুভ্রতা—রাজপথে, জনতার মধ্যে, দোকান-হাটে; এবং লোকদিগের অম্লান-শুভ্র পরিচ্ছদের উপর — বৃহদাকার মল-পাগড়ির সমস্ত “সারিগম” মন্দ্র গ্রাম হইতে তার গ্রাম পর্য্যন্ত চলিয়াছে।

 রমণীরা অদৃশ্য; (কেন না, ইহা মুসলমানরাজ্য) একটা শাদা ঘেরাটোপে উহাদের আপাদমস্তক আবৃত; বিড়ালগর্ত্তের ন্যায় প্রায়ই উহাতে একএকটা ছিদ্র কাটা;—তাহার মধ্য হইতে, কোলের শিশুর মত ছোটছোট সুন্দর মাথা বাহির হইয়া আছে দেখিতে পাওয়া যায়।

 এই দীর্ঘপ্রবাসী নৃপতির মহিমা কীর্ত্তন করিবার জন্য যে সমস্ত রেশম, মাল, মখমলের সাজসজ্জা স্থানে-স্থানে সজ্জিত রহিয়াছে, তাহারা সকলেই যেন নীরব ভাষায় বলিতেছে:—"নিজামের জয় হউক্!” সমস্ত হৈবাবাদ আজ উল্লাসভরে নিজামের প্রতীক্ষা করিতেছে। এক সপ্তাহ হইতে সমস্তই প্রস্তুত হইয়া আছে;—এমন কি, সজ্জিত পুষ্পগুলি সূর্যোত্তাপে শুকাইয়া যাইতেছে। এখন নিজাম আশিয়িক-আড়ম্বর-সহকারে কলিকাতার রাজপথে ভ্রমণ করিতেছেন;—১২ খানা সোনার গাড়ি তাহার পিছনে-পিছনে চলিয়াছে। তিনি স্বরাজ্যে আর ফিরিয়া আসেন না, কোন সংবাদ দেন না, যাহা খেয়াল হইতেছে তাহাই করিতেছেন। কিন্তু ভারতবাসীরা ইহাতে বিস্মিত নহে;—কেন না, তাহারা সকলেই এইরূপ: করিয়া থাকে। তাই, নিরাশ না হইয়া তাহারা ক্রমাগত তাহার প্রতীক্ষা করিতেছে। তা ছাড়া, এই সকল লঘুবস্ত্রের সাজসজ্জা যে বৃষ্টিতে ভিজিয়া যাইবে, তাহারও কোন আশঙ্কা নাই; কেন না, আকাশ এখন একেবারেই নিমেঘ।

 প্রতিদিন, যেমন বেলা অধিক হইতে থাকে—সেই পরিমাণে, সমস্ত নগরীর ধূলিরাশি, জনকোলাহল, সঙ্গীতাদিরও বৃদ্ধি হইতে থাকে। অবশেষে রাত্রিসমাগমে সমস্তই উপশান্ত হইয়া যায়॥

 ঘোড়ার গাড়ি, বলদের গাড়ি ক্রমাগত যাতায়াত করিতেছে। রহস্যময়ী