পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

সিংহলে।

২। শৈল-মন্দির।

 যে অরণ্যের মধ্যে ভগ্নাবশেষগুলি নিহিত, সেখান হইতে বাহির হইয়া, জঙ্গলের সম্মুখে আসিয়া পড়িলাম। এইখানকার শৈল-মন্দিরে পূর্বতন দেব-দেবীর মূর্তিগুলি অক্ষত রহিয়াছে। এই পরিত্যক্ত বনভূমির দূর দিগন্তে, এই শৈল-মন্দিরের ন্যায়, আরও অনেক শৈলপিণ্ড ইতস্ততঃ দৃষ্ট হয়। না জানি, পুরাকালের কোন্ প্রলয়-প্লাবনের প্রভাবে এই গুলি সমুদ্ভুত হইয়াছিল। ঠিক মনে হয়, যেন ধরণীর মুখ কালো হইয়া স্থানে স্থানে ফুলিয়া উঠিয়াছে। এই গোলাকার মসৃণ শৈলপিণ্ডগুলি কি করিয়া এখানে আসিল, চতুর্দ্দিকস্থ ভূমি হইতে তাহার কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। মনে হয়, যেন এক-একটা প্রকাণ্ড পশু যুথ-ভ্রষ্ট হইয়া তৃণভূমির উপর একাকী বসিয়া আছে।

 বৃহদাকার কোন জন্তু-বিশেষ ও বৌদ্ধমন্দিরের “দাগোবা”—এই দুয়ের সম্মিলনে যেন এই মন্দিরটি নিশ্মিত;—শ্যামল স্তপের উপর সৌধ-ধবল ক্ষুদ্র একটি “দাগোবা” যেন স্থাপিত হইয়াছে। যেন হাতী তাহার কালো পিঠের উপর চূড়াকার একটা হাওদা বহন করিতেছে।

 আমরা পৌছিয়া দেখিলাম, জঙ্গলটি অস্তোন্মুখ সূর্যের কিরণতলে প্রসারিত; চারি দিক নিস্তব্ধ; মন্দিরের সমীপে জন-প্রাণী নাই; ভূমির উপর চামেলী প্রভৃতি এক রাশি ফুল ছড়ানো রহিয়াছে; ফুলগুলি শুখাইয়া গিয়াছে, কিন্তু এখনও তার গন্ধ যায় নাই। এইগুলি পূর্ব্বদিনের পুন্য।দেবতারা এখানেও সে বিস্মৃত নহেন, এই পুষ্পাঞ্জলিই তাহার সাক্ষী।

 কোন বহদাকার জন্থর ন্যায় এই শৈলমণ্ডলের গঠন-ভঙ্গী; উহার পাদদেশ সরোবরের জলে বিধৌত; সরোবরটি কুম্ভীরের আবাস ও পঙ্কজশোতিত।