পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯৬
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

ইতস্তত সমুখিত হইয়াছে। এই পর্ব্বতগুলা যেন একটু বেশিরকম মানানসই; মাথায়-মাথায় সব একসমান;—দেখিতে কারাগারের ন্যায় বৃহৎ দুর্গনগরের ন্যায়।

 আজ আমি ভারতীয় শকটে করিয়া প্রখর রৌদ্রে এই বিজন প্রদেশ অতিক্রম করিলাম। যাত্রাপথের দুই ধারে মরা গাছগুলা খুটির মত সারি-সারি পোতা রহিয়াছে।

 সন্ধ্যার মুখে একটা মৃতনগরের উপচ্ছায়া পার হইয়া গেলাম—যাহা পূৰ্বে দৌলতাবাদ নামে প্রসিদ্ধ ছিল এবং যেখানে নির্বাসিত হইয়া, তিনশত বৎসর হইল, গল্কণ্ডার শেষ- সুন ইহলীলা সংবরণ করেন। পুরাতন চিত্রসমূহে, “ব্যাবেলের টাওয়া” যেরূপ দেখা যায়—তোর সহিত অনেকটা এই মৃতনগরের সাদৃশ্য দূর হইতে উপলব্ধি হয়। ইহা একটি নগরগিরি,—একটি মন্দিরদুর্গ, একটি বৃহৎ শৈলখণ্ড—যাহা হইতে পূৰ্বকালীন মনুষ্যেরা ইহাকে খুদিয়া-কাটিয়া বাহির করিয়াছে;— যাহাতে ইমারতের মালমসল। প্রয়োগ করিয়াছে,—যাহার আপাদমস্তক একটু মানাই করিয়া গড়িয়া তুলিয়াছে এবং যাহা এক্ষণে বালুরাশিসমুখিত মিশরীয় পিরামিড, অপেক্ষাও অধিক বিস্ময়জনক বলিয়া বোধ হয়। ইহার কাছাকাছি শতশত সমাধিমন্দির ভগ্নদশাপন্ন হইয়া মাটীর মধ্যে বসিয়া গিয়াছে। কত সূচ্যগ্রচূড়াবহুল দন্তুর প্রকাৱাবলী পরস্পরকে বেষ্টন করিয়া রহিয়াছে, তাহা নির্ণয় করা যায় না। গল্কওার ন্যায় এখানেও লৌহশলাকাবৃত ভাঁজওয়ালা ভীষণ জোড়া-কপাটের মধ্য দিয়া ভিতরে প্রবেশ করিলাম। কিন্তু উহার অভ্যন্তরে জনপ্রাণী নাই। কেবলি নিস্তব্ধতা, ভগ্নাবশেষ, আর ইতস্তত শুস্কতসমূহ বিরাজমান; বটবৃক্ষগুলা কঙ্কালসার,উহার শাখা-প্রশাখা হইতে দীর্ঘ কেশগুচ্ছের ন্যায় শিকড় নামিয়াছে। আবার আমরা সেইরূপ ভাঁজ-কপাটের দরজা দিয়া বাহির হইলাম,—সেইরূপই অকেজো ও সেইরূপই ভীষণ বর্মে আবৃত।