পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০২
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

প্রস্তরবিগ্রহ, যেমন দিবসে, তেম্‌নি রাত্রিকালেও অচল, স্থির। গুহা হইতে বাহির হইয়া তাহার ল্যাণ্ঠান্‌ নিবিয়া গেলে, সে ইচ্ছা করিয়া আবার ফিরিয়া চলিল; আমি বুঝিলাম, আগে যে-জিনিষের কাছে যাইতে সাহস করিতেছিল না, এখন আমাকে তাহার কাছে লইয়া যাইতে চাহে। যে বালুকারাশি সমুদ্রের সৈকতবেলাভূমিকে স্মরণ করাইয়া দেয়, সেই বালুকারাশির উপর দিয়া আমরা দ্রুতপদে চলিতে লাগিলাম;— শৈলভূমির রেখা অনুসরণ না করিয়া এবার তাহার উল্টাদিকে চলিলাম। সেই সব প্রবেশপথের সম্মুখে আর থামিলাম না। কেন না, আমরা পূৰ্বেই তাহার রহস্যভেদ করিয়াছি॥

 যখন আমরা শেষসীমায় আসিয়া পৌছিলাম, তখন রাত্রি অনেক হইয়াছে। আমার পথপ্রদর্শক আবার তাহার ল্যাণ্ঠান্‌ জ্বলিল এবং আলিয়া একটু পিছু হটিয়া দাঁড়াইল। বোধ হয়, যেখানে আমরা যাইতেছি, সে স্থানটা খুব অন্ধকার।

সর্ব্বাপেক্ষা এই প্রবেশপথটি অধিকতর ভীষণ। কারণ, এইমাত্র যে বিগ্রহগুলি দেখিয়া আসিলাম, তাহাদের ন্যায় এই দ্বারদেশের মূর্তিগুলা শান্তচিত্ত নহে—পরন্তু যেন রোষের আবেশে ও কষ্টযাতনায় আড়ষ্ট হইয়া গিয়াছে—অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বাঁকিয়া পড়িয়াছে; এই ঘনঘোর অন্ধকারের মধ্যে এত কম দেখা যায় যে, কোন্ মূর্তিগুলি পাথর কাটিয়া গঠিত এবং কোন্গুলিই বা পাথরের গায়ে উৎকীর্ণ, তাহা নির্বাচন করা কঠিন। এই গণ্ডশৈলগুলাও, এই অতিভারাক্রান্ত পাষাণসুপগুলাও যেন অবসন্নভাবে শুইয়া পড়িয়াছে; যেন তীব্র যাতনায় উহাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বাঁকিয়া-চুরিয়া গিয়াছে। আমরা এখন শিবালয়ের সম্মুখে উপস্থিত;— সেই শিব,—যিনি মৃত্যুর দেবতা, সংহারের জন্যই যিনি সংহার করিয়া থাকেন, সংহারেই যাঁহার আনন্দ।

ল্যাণ্ঠান্‌এই দ্বারদেশের নিস্তব্ধতায় কি-যেন-একটা বিশেষত্ব আছে - একটা