পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০৪
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

এই প্রাঙ্গণগুলার বিশেষত্ব এই যে, উহার দেয়াল ২০০ ফীট্‌ উচ্চ এবং উহার গায়ে থাকে-থাকে কতকগুলি বারণ্ড-দালান উপর্যু্যপরি স্থাপিত এবং অসংখ্য বিগ্রহ যুদ্ধোদ্যত সৈন্যের ন্যায় সারি-সারি সজ্জিত। এই সব প্রাঙ্গণপ্রাচীর ভারকেন্দ্রচ্যুত হইয়া ভীষণভাবে ঝুঁকিয়া রহিয়াছে। এই প্রাচীর এক-একটা অখণ্ড কঠিন প্রস্তরখণ্ডে নির্মিত; উহার আপাদমস্তক কোথাও একটি ফাট্‌ নাই, চীর নাই। প্রাঙ্গণের এই দেয়ালগুলা খুব ঝুকিয়া থাকায় গুহার আকার ধারণ করিয়াছে, এবং এরূপ ভীষণ, যেন আমাদিগকে গ্রাস করিতে উদ্যত।

 ওদিক্‌কার কতকগুলা প্রাঙ্গণ একেবারে খালি। কিন্তু এই প্রাঙ্গণগুলা বিরাট্ পদার্থসমূহে আচ্ছন্ন;— ক্রমসঙ্কীর্ণ চতুষ্কোণ স্তম্ভমন্দির (Obelisk), পীঠের উপর স্থাপিত হস্তী, মন্দিরের দ্বার প্রকোষ্ঠ, দেবালয় প্রভৃতি। এখন প্রায় দ্বিপ্রহর রাত্রি। এই অন্ধকারের মধ্যে আমাদের ক্ষুদ্র দীপটি বিলীন হইয়া গিয়াছে। সুতরাং এখানকার সমগ্র না-কল্পনাটি যে কি, তাহা এখন নির্ধারণ করা অসম্ভব। এখন চতুর্দিকে কেবল প্রাচুর্য্য ও ভীষণতাই লক্ষিত হইতেছে। যাইতে যাইতে কোথাও বা প্রস্তরে-অঙ্কিত একটা বৃহৎ শবমূর্তি, কোথাও বা কোন নরকঙ্কালের অথবা দৈত্যের মুখে অঙ্কিত বিকট হাস্যরেখা মুহুর্তকাল বিদ্যুতের ন্যায় স্ফুরিত হইয়া আবার তখনি সেই বিশৃঙ্খল পদার্থরাশির মধ্যে মিশিয়া যাইতেছে।

 প্রথমে আমরা শুধু কতকগুলি নিঃসঙ্গ হস্তী দেখিয়াছিলাম। এখন দেখিতেছি, কতকগুলা হস্তী দল বাঁধিয়া সারি-সারি দণ্ডায়মান, তাহাদের শুড়গুলা নীচের দিকে ঝুলিয়া আছে। আরো কত প্রকার জীবজন্তু হাতপা খিচাইয়া মরণকে যেন ভ্যাংচাইতেছে। ইহাদের মধ্যে এই হাতীরাই শান্তমূর্তি। মধ্যস্থলে অখণ্ড-প্রস্তরের যে তিনটি বৃহৎ মন্দির—এই হস্তীরা সেই মন্দির পৃষ্ঠে ধারণ করিয়া রহিয়াছে।

 এই সকল মন্দির ও গুহার চতুর্দিকে সেই যে ভীষণ দেয়ালগুলা—এই