পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সিংহলে।
১৭

 নিকটে আসিলে লক্ষ্য করা যায়, উহাদের মসৃণ গাত্রে, কতকগুলি • অস্পষ্ট উৎকীর্ণ-চিত্র মুদ্রিত রহিয়াছে। এত সূক্ষ্ম ও অস্পষ্ট যে, ছায়ার ন্যায় দৃষ্টিপথ হইতে ক্রমাগত সরিয়া সরিয়া যায়। কিন্তু চিত্রগুলি এরূপ নিপুণভাবে অঙ্কিত যে, প্রকৃত বলিয়া ভ্রম হয়। হস্তীর শুণ্ড, কর্ণ, পদ, অঙ্গাদির গঠন—ইহাই চিত্রের বিষয়। শৈলের প্রস্তরগুলি স্বভাবতই এমন আশ্চর্য্যভাবে বিন্যস্ত ও তাহাদের গায়ের এরূপ স্বাভাবিক রং যে, উহাতে হস্তীর গঠন ও বর্ণ যেন পূর্ব্ব হইতেই প্রস্তুত হইয়াছিল। কেবল, শিল্পী অতি অপূর্ব্ব কৌশলে উহাদিগকে আপন কাজে লাগাইয়াছে,এইমাত্র। স্থানে স্থানে, এই গোলাকার শৈলের ফাটলে ফাটলে ছোট-ছোট গাছের চারা বাহির হইয়াছে। পুরাতন চামড়ার রংএর মত এই শৈল-প্রস্তরের রং—এই রংএর গায়ে এই চারাগুলি এত পরিস্ফুট ও উজ্জ্বল দেখাইতেছে যে, সত্যকার উদ্ভিজ্জ বলিয়া মনে হয় না। 'পেরিউয়িঙ্ক’এর গাছ খুব লাল, ‘হিবিসকাস’ও খুব লাল, সুপারীর চারাগুলি অত্যন্ত সবুজ। মনে হয়, যেন খাগড়ার ডাঁটার উপর পালকের থোপনা ঝুলিতেছে।

 শৈলমগুলের পশ্চাদ্দেশে একটি প্রাচীন ধরণের ছোট বাড়ী প্রচ্ছন্ন। উহার মধ্যে মন্দির-বক্ষক বৌদ্ধ-পুববাহিতেরা বাস করে। উহাদিগের মধ্যে এক জন, আমার সহিত সাক্ষাৎ করিবার জন্য বাহির হইয়া আসিলেন:যুবা পুরুষ, বৌদ্ধ পুরোহিতের অনুরূপ পীত রংএর বহির্বাসে গাত্র আচ্ছাদিত, কেবল একটি স্কন্ধ ও একটি বাহু অনাবৃত। দেবালয়ের দ্বার উদঘাটন করিবার জন্য এক ফুটের অধিক লম্বা, কারুকার্যে অলঙ্কৃত একটি চাবি তাঁঁহার সঙ্গে। ইহার মুখ সুন্দর ও গম্ভীর, ইহার চোখ দুটিতে যোগিজনসুলভ রহস্যময় ধ্যানের ভাব যেন পরিব্যক্ত। হস্তে চাবিটি লইয়া যখন ধীরে ধীরে অগ্রসর হইতে লাগিলেন, তখন সূর্যের কনক-কিরণ তাঁহার উপর পতিত হওয়ায় মনে হইল, যেন আমাদের ‘পিটার’মুনির তাম্রপ্রতিমাটি রক্ত বর্ণে রঞ্জিত না হইয়া, পীতবর্ণে রঞ্জিত হইয়াছে। লাল