পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০৮
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

দৃশ্য নাই; মুখভঙ্গীর রেখামাত্র নাই; কিছুই নাই। কেবল একটা শূন্য দেবালয়; তাহাতে প্রশান্ত গাম্ভীয্য বিরাজমান। কেবল এখানকার করাল শব্দমুখরতা বাহিরের অপেক্ষাও বেশী। একটু কথা কহিলে কিংবা পায়ের শব্দ হইলে চতুর্দিক ভয়ানক প্রতিধ্বনিত হইয়া উঠে। তা ছাড়া, বাস্তবপক্ষে এখানে এমন কিছুই নাই, যাহাতে ভয় হইতে পারে। এমন কি এখানে সেই পাখীগুলার কালো পাখার নাড়াচাড়াও নাই। এই সব চৌকোণা থাম - যাহা খিলানছাদের সহিত একই অখণ্ডপ্রস্তরে গঠিত - এই সব থামের অলঙ্কারগুলি নিতান্ত সাদাসিধা ও কঠোরধরণের। কতকগুলি রেখাই উহাদের প্রধান অলঙ্কার।

 দারুণ ভগ্নাবস্থা ও সহস্রবর্ষব্যাপী জরাজীর্ণতা সত্ত্বেও এ স্থানটি এখনো পুণ্যতীর্থরূপে বিরাজমান। প্রবেশমাত্রই এই ভাবটি যেন সহসা অন্তরে জাগিয়া উঠে। এখানে আসিয়া যে ভয়ের উদয় হয়, সে ভয়ও ধর্ম্ম ভাবসংশ্লিষ্ট। মন্দিরের দেয়ালগুলা মশাল ও প্রদীপের ধোয়ায় কালো হইয়া গিয়াছে। কুটিমের সান্ চকচক করিতেছে ও “তেলচুকচুকে” হইয়া উঠিয়াছে। ইহাতেই বুঝা যায়, সময়ে-সময়ে এখানে বহুল জনতা হইয়া থাকে। অন্য যুগের লোকেরা, যে পর্ব্বতে মহাদেবের জন্য গুহা প্রস্তুত করিয়া রাখিয়াছিল, মহাদেব এখনো সে পর্ব্বতটিকে পরিত্যাগ করিয়া যান নাই। এই পুরাতন দেবালয়ের মধ্যে এখনো যেন একটা প্রাণ রহিয়াছে।

 যে তিনটি দালান, যে তিনটি দেবালয় একটার পর একটা ক্রমান্বয়ে অবস্থিত-ইহারা একই অখণ্ড প্রস্তরে গঠিত। শেষেরটির পুণ্যমাহাত্ম্য সর্বাপেক্ষা অধিক; তাই, ইহার মধ্যে প্রায় কেহই প্রবেশ করিতে পায় না। অন্য ব্রাহ্মণিক দেবালয়ের এইরূপ স্থানে আমি পূর্বে কখনই প্রবেশ করিতে পাই নাই।

 এখানেও আমি মনে করিয়াছিলাম, কি-না-জানি ভয়ানক দৃশ্য দেখিব।. কিন্তু এখানেও সেরূপ দৃশ্য প্রায় কিছুই নাই।