পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হৈদরাবাদে
২১৩

 স্তম্ভমন্দিরসমূহের পরেই,—হস্তিপৃষ্ঠপরিক্বত অখণ্ড প্রস্তরখোদিত সেই সব দেবালয় গুহার গভীরদেশে খাড়া হইয়া আছে; অসংখ্য-মূর্তি-উৎকীর্ণ গুহার দেয়ালগুলা দেবালয়ের চতুর্দিকে ঝুঁকিয়া রহিয়াছে কিন্তু উদীয়মান আলোকে এ সমস্ত আর তত বিরাট—তত অতিমানুষিক বলিয়া বোধ হইল না; সৃষ্টির যিনি দেবতা, তাহার বাসস্থানের পক্ষে ইহা যথেষ্ট ভীষণ কিংবা যথেষ্ট অলৌকিক বলিয়া মনে হইল না। এই সমস্ত যে জাতির যেসময়কার হস্তরচনা, সে জাতির তথনো শৈশবদশা উত্তীর্ণ হয় নাই;. সুতরাং জীবনের যে কি অপরিমেয় ভীষণতা, সে সময়ে উহারা যথেষ্টরূপে হৃদয়ঙ্গম করিতে পারে নাই; অথবা হৃদয়ঙ্গম করিয়া তাহার উপযুক্ত সাঙ্কেতিক প্রতিরূপ নির্ধারণ করিতে সমর্থ হয় নাই। একে ত তমসাচ্ছন্ন দ্বিপ্রহর রাত্রি, তাহাতে আবার ল্যাণ্ঠানে ভাল আলো হইতেছিল না— এই অবস্থায় গতকল্য এখানে আসিয়া আমার মনে যে ধারণা হইয়াছিল, সেই ধারণার অনুরূপ আজ এখানে কিছুই দেখিতেছি না।

 অত্রত্য সমস্ত পদার্থেরই যে চূড়ান্ত ভগ্নদশা, তাহা আজ প্রভাতের আলোকে বিলক্ষণ জানা যাইতেছে। ভাঙা থাম, থামের মাথাল, মুক্তিদের মুণ্ড, মুর্ত্তিদের ভগ্নদেহ—এই সমন্তের উপর দিয়া শুধু যে শতশত শতাব্দী চলিয়া গিয়াছে তাহা নহে; তা ছাড়া, সেই বিজয়ী মুসলমানদিগের আমলে,—যাহারা ঈশ্বরকে ভিন্ন নামে অভিহিত করে, সেই ধর্ম্ম্মোন্মত্ত মনুষ্যেরা অন্য স্থানের শিবমন্দিরের ন্যায় এই শিবমন্দিরগুলিকেও আক্রমণ করিয়াছিল।

 গতকল্য সেই গভীর রাত্রে, যাহা আমি সন্দেহ পর্য্যন্ত করি নাই, এখন তাহা স্পষ্ট দেখিতেছি;—পূর্ব্বে এই সমস্ত পদার্থে রং মাখানো ছিল। এই এক-ঝোকা শৈলসমূহের আধো-আঁধারে যে সকল অসংখ্য অখণ্ডমূর্তি দেখিতে পাওয়া যায়—চারিধারে যে সকল বিচিত্র-অঙ্গভঙ্গিবিশিষ্ট মূর্তুিদিগের ভগ্ন অবয়বাদি দেখিতে পাওয়া যায়—সে-সমন্তে এখনো