পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১৪
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

একটু ফিকে সবুজের পোঁচ রহিয়াছে;—কতকটা যেন শবের রং। পক্ষান্তরে, উহাদের বাসস্থানের গভীরদেশে শুষ্ক শোণিতের ন্যায় একটু লাল রহিয়া গিয়াছে।

 মধ্যস্থলের অখণ্ডপ্রস্তরখোদিত মন্দিরগুলিও পূর্ব্বকালে মিশ্রবর্ণ ছিল। প্রাচীন মিশরের থেরিস্ ও মেফিস নগরের গৃহাদিতে যেরূপ সূক্ষ্ম বর্ণভেদ পরিলক্ষিত হয়, সেইরূপ বিচিত্র মিশ্রবণ এখানকার মন্দিরাদিতে এখনো রহিয়া গিয়াছে;—শাদা, লাল, গেরুয়া হলদে।

 আজ প্রাতে আমি একাই, উপরে উঠিব, এইরূপ স্থির করিয়াছিলাম। আমার পথপ্রদর্শক সেই ছাগপালক যতই মূখ বর্বর হউক না কেন, তবু সে চিন্তাধী মনুষ্য। সে আমার সঙ্গে থাকিলে শিবের সহিত মখামুখী করিয়া আলাপ করিবার পক্ষে ব্যাঘাত হইতে পারে।

 পূৰ্বে যেরুপ দেখিয়াছিলাম,—মন্দিরের অভ্যন্তরে এখনো সেইরূপ নিস্তব্ধতা। কিন্তু খিলান-ছাদের নীচে আর একটু বেশি আলো পাইব বলিয়া আমি আশা করিয়াছিলাম, কিন্তু সে আশা পূর্ণ হইল না। এখন সূর্যোদয়; ইহারই মধ্যে বাহিরের লোহিত ক্ষেত্রভূমিতে যেন আগুন জ্বলিয়া উঠিয়াছে। কিন্তু বাহিরের এই প্রখর উজ্জ্বল আলোক সত্ত্বেও এখানে ঘোর অন্ধকার। উপরিস্থ গুরুভার পাষাণরাশির তলদেশে এখনো যেন একটু নিশার শৈত্য কারাবদ্ধ হইয়া আছে। মন্দিরের যে অংশটি সর্ব্বাপেক্ষা পবিত্র, তাহারই পশ্চাদ্ভাগে—যেখানকার দেয়ালগুলা বহুশতাব্দী হইতে মশালের ধোঁয়ায় কালো হইয়া গিয়াছে—সেখানে অনন্ত অন্ধকারে পরিবেষ্টিত সেই দেবতার তীব্র উপহাসব্যঞ্জক মুখচ্ছবি বিরাজমান—যিনি জন্মমৃত্যুর দেবতা; সেই কৃষ্ণবর্ণ উপলখণ্ড—সেই প্রস্তরখোদিত শিবলিঙ্গ।


দুর্ভিক্ষের গান।

 গ্রামের প্রবেশপথে রাস্তার চৌমাথায় কতকগুলি শিশু-কতকগুলি ক্ষুদ্র নরকঙ্কাল বলিলেও হয়—দুই হাতে আপনাদের উদর ধরিয়া একটা-কি