পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

‘পেরি-উইঙ্কলে’র ঝোপের মধ্য দিয়া শৈল-খোদিত একটা সিঁড়ি বাহিয়া, আমরা উপরে উঠিলাম। চতুর্দিকের জঙ্গল-পরিধিটি যেন আরও বর্ধিত হইল।

 মুখ্য শৈলখণ্ডের মধ্য-পথে কঠোর শৈল-গর্ভ ভেদ করিয়া, পাথর কাটিয়া দেবালয়টি নির্ম্মিত। প্রথমে একটি গহ্বর; সেখানে প্রস্তরবেদিকার উপর, যূথী জাতি মল্লিকা প্রভৃতি টাটকা ফুল বিকীর্ণ রহিয়াছে। গম্বরের শেষ সীমায় দেবালয়ের প্রবেশ-দ্বার। দুইটি তাম্রকবাটে দ্বারটি রুদ্ধ। উহাতে, কারুকার্য্যবিশিষ্ট একটি প্রকাণ্ড তালা লাগানো আছে।

 ঝনৎকার-সহকারে ধাতব কবাটদ্বয় উদ্ঘাটিত হইবামাত্র, রং-করা কতকগুলি বড়-বড় পুতুল বাহির হইয়া পড়িল। বহুমূল্য সুগন্ধি-নির্য্যাসের চৌবাচ্চা যেন সহসা অনাবৃত হইল। প্রতিদিন, গোলপ-নির্য্যাসে ও চন্দন-রসে ভূমি পরিসিক্ত ও যুথী-জাতি-মল্লিকা প্রভৃতি সুগন্ধি শুভ্র পুষ্পস্তবকে সমাচ্ছন্ন হওয়ায়, তত্র বায়ু সুরভিত ও কুট্টিম-তল একেবারে সাদা হইয়া গিয়াছে। যে দেবতারা এই সুড়ঙ্গ-গর্ভের অন্ধকারে বাস করেন, তাহারা এই সুরম্য সুমধুর সৌরভের মধ্যে নিত্য নিমগ্ন।

 এই দেবালয়ে অনেকগুলি পুত্তলিকা; কক্ষটি আলমারীর ন্যায় সংকীর্ণ, কষ্টে-সৃষ্টে ৪।৫ জনের দাঁড়াইবার স্থান হয়। দেবীগুলি ১২ ফুট উচ্চ, শৈলপ্রস্তরের মধ্য হইতেই খুদিয়া বাহির করা, এবং বিবিধ সাজসজ্জায় বিভূষিত। বৌদ্ধপুরোহিতের পরিচ্ছদের ন্যায় ইহাদের মুখ পীতবর্ণ, এবং ইহাদের মুকুটগুলি খিলানে গিয়া ঠেকিয়াছে। মধ্যস্থলে অতিমানুষ-বিরাটআকারের একটি বুদ্ধমূর্ত্তি সেই পরিচিত চিরধ্যানের ভঙ্গীতে আসনস্থ। পুত্তলিকার আকারে ছোট ছোট দেবতারা ইহার সমীপে ঘেঁসাঘেঁসি বসিয়া আছেন। আর যে বিরাট দেবীমূর্ত্তিগুলি মণ্ডলাকার চারি দিকে অবস্থিত, উহারা যেন এই পুতুলগুলির দিকে একদৃষ্টে চাহিয়া আছে। উহারের অলঙ্কারগুলি খুব উজ্জ্বল রং এখনও বেশ টাটকা রহিয়াছে,