পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হৈদরাবাদে
২১৭

না দেখিতেছি। এইবার দুর্ভিক্ষের দেশে প্রবেশ করা গিয়াছে। কতক গুলা শিশুর কণ্ঠস্বর,—ছুটির সময়ে, ইস্কুলের ছেলেরা যেরূপ কোলাহল করে, কতকটা সেইরূপ—কিন্তু এই কণ্ঠস্বর কেমন-যেন চেরা-চেরা, খ্যাখেন, অবসন্নপ্রায় স্পষ্ট শুনা যায় না।•••

 আহা! বেচারা শিশুগুলা, ঐখানে ঐ রেলিং-বেড়ার ধারে ভিড় করিয়া ঠেলাঠেলি করিতেছে এবং উহাদের শুষ্কবাহু আমাদের দিকে প্রসারিত করিতেছে;—যে অস্থিখণ্ডের শেষপ্রান্ত হইতে হাতটি বাহির হইয়াছে, ঐ অস্থিখণ্ডই উহাদের বাহু। উহাদের শ্যামল গায়ের চামড়া পর্দায়-পর্দায় কুঁচকিয়া গিয়াছে, উহাদের শীর্ণ কঙ্কাল বাহির হইয়া পড়িয়াছে —দেখিলে ভয় হয়। উহাদের উদর দেখিলে মনে হয়, যেন একেবারেই অন্ত্রশূন্য —এম্‌নি সমতল। চোখের পাতার উপব, ওষ্ঠের উপর মাছি লাগিয়া রহিয়াছে —শেষাবশিষ্ট আর্দ্রতাটুকু পান করিবে, এই আশায়। উহাদের শ্বাস যেন ফুরাইয়া আসিয়াছে, দেহে যেন আর প্রাণ নাই, তবু দাঁড়াইয়া চীৎকার করিতেছে। উহারা খাইতে চাহে —শুধু একমুঠা খাইতে চাহে। উহারা মনে করিতেছে, যাহারা এমন বড়-বড় গাড়ি চড়িয়া যাইতেছে, অবশ্যই উহারা ধনিলোক হইবে;—অবশ্যই উহারা সদয় হইয়া কিছু আমাদের নিকট ছুঁড়িয়া দিবে।

 —"মহারাজ! মহারাজ!” (মহাশয়, মহাশয়)” -ঐ সব ক্ষুদ্র কণ্ঠ গানের কম্পিত স্বরে একসঙ্গে বলিয়া উঠিল। উহাদের মধ্যে এমন শিশুও আছে, যাহাদের বয়স পূরা চি বৎসর হইয়াছে কি না, সন্দেহ; তাহারাও “মহারাজ! মহারাজ!” বলিয়া চীৎকার করিতেছে; উহারাও বেড়ারেলিংএর মধ্যদিয়া শীর্ণ অঞ্জলিবদ্ধ হস্ত বাহির করিয়া রহিয়াছে।

 এই ট্রেণে যাহারা আমার সহযাত্রী, উহারা তৃতীয় কিংবা চতুর্থ শ্রেণীর সামান্য-অবস্থার ভারতবাসী। উহাদের যাহা-কিছু সঙ্গে ছিল,—ছুঁড়িয়া ছুঁড়িয়া উহারা ঐ শিশুদিগের নিকট ফেলিতেছে;— চাউলপিঠার উচ্ছিষ্টাংশ