পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হৈদরাবাদে
২১৯

চর্ম্মে, যাহা হইতে পূতিগন্ধ বাহির হইতেছে এবং যাহাতে ঝাঁকে-ঝাকে মাছি আসিয়া বসিতেছে।

 আমার কাছে যাহা-কিছু ছিল, সমস্তই উহাদের নিকট ছুঁড়িয়া দিয়াছি…কি উৎপাত। এখান হইতে গাড়ি কি আর ছাড়িবে না? -আহা! ঐ ৩৪ বৎসরের শিশুটির মুখে কি হতাশভাব! উহা অপেক্ষা একটু বয়সে বড় আর-একটি শিশু উহার মুষ্টিবদ্ধ হাত হইতে উহার ভিক্ষাসমগ্রীটি ছিনাইয়া লইয়াছে!…

 এতক্ষণের পর ট্রেণটা ঝাঁকানি দিয়া নড়িয়া উঠিল, চলিতে লাগিল; সমস্ত কোলাহল ক্রমে দূরে চলিয়া গেল। আবার আমাদিগকে সেই নিস্তব্ধ জঙ্গলের মধ্যে আনিয়া ফেলিল।

 এ, মরা জঙ্গল। পূর্ব্বে এই জঙ্গল বসন্তকালে জীবজন্তুতে আকীর্ণ হইত; তৃণাদি, ঝোপ্‌ঝাড় এখন আর হরিদ্বর্ণ ধারণ করে না; এই ফাল্গুনও রসসঞ্চার করিয়া উদ্ভিজ্জকে বাঁচাইয়া তুলিতে পারিতেছে না। প্রচণ্ড সূর্যের প্রখর উত্তাপসত্ত্বেও, অরণ্যাদির ন্যায় এই জঙ্গলও শীতের ভাব ধারণ করিয়াছে। শীর্ণকায় হরিণেরা তৃণ খুঁজিয়া না পাইয়া, জলের সন্ধান না পাইয়া, আকুলভাবে ইতস্তত বিচরণ করিতেছে। দূর-দূর ব্যবধানে, কোন একটি শুষ্কগাছের গুঁড়িতে কোন একটি তরুণ শাখায়, কোন একটি নিঃসঙ্গ ক্ষুদ্র উপশাখায়—যে-কিছু রস অবশিষ্ট ছিল তাহাই শোষণ করিয়া, তাহা হইতে দুইচারিটি নরম পাতা বাহির হইয়াছে, অথবা একটি বড়-রকমের লাল ফুল, এই মরুদৃশ্যের মাঝখানে, উদাসভাব ফুটিয়া রহিয়াছে।

 যে গ্রামেই ট্রেন্ আসিয়া থামে, সেইখানেই এই সব দুর্ভিক্ষপীড়িত ক্ষুধিতের দল রেলিংএর মধ্য দিয়া আমাদের প্রতি দৃষ্টিনিক্ষেপ করে। যাহা শুনিতে ভয় হয়, যাহা সর্ব্বত্রই একই ধরণের—সেই চেরা-চেরা আওয়াজের একসুরো গান কোন গ্রামের নিকটে গাড়ি থামিলেই শুনিতে