পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২০
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

পাওয়া যায়। এবং যখন আমরা সেই তাপদগ্ধ বিজন দেশের মধ্য দিয়া—দূরে চলিয়া যাই, তখন দারুণ নৈরাশ্যে উহাদের কণ্ঠস্বর আরো স্ফীত হইয়া আমাদিগকে অনুধাবন করে।


উদয়পুরমন্দিরের ব্রাহ্মণ।

 এই ভীষণ গুহা হইতে প্রায় ২২৫ক্রোশ দূরে, যে দিকে শুষ্কতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাইতেছে—সেই উত্তরপশ্চিমাভিমুখে, মেওয়ারদেশের শুভ্রনগর, উদয়পুর;—আমাদের যাত্রাপথে থামিবার একটি সুন্দর আড্ডা। এই মহাদুর্ভিক্ষের পথটি ধরিয়া আমি এখন চলিতেছি।

 এইখানে পৌঁছিয়াই বহুদূর হইতে দেখা যায় - রাশীকৃত প্রাসাদ ও মন্দির ধব্‌ধব্‌, করিতেছে; চারিদিক্‌ পর্ব্বতে বেষ্টিত। বৃষ্টির অভাবে, সরস নবীন শাখাপল্লবের স্থলে, শুষ্ক মরা পাতা; অত্রত্য ধরণীর কি অস্বাভাবিক বিষন্নতা!—এই বসন্তকালেও বেশভূষা পরিহার করিয়া পীতবর্ণ ধারণ করিয়াছে। এ সমস্ত সত্ত্বেও, দূর হইতে মনে হয়—নগরটি, বনাচ্ছন্ন ঢালুদেশের পাদমূলে, তরুপুঞ্জের মধ্যে, রহস্যময় শান্তির নীড়ে বেশ আরামে রহিয়াছে।

 কিন্তু যতই নিকটবর্ত্তী হইতেছি, দুঃখকষ্টের নিদর্শন চারিদিকে ক্রমশ প্রকাশ পাইতেছে! নগরতোরণ পর্য্যন্ত যে রাস্তাটি গিয়াছে, তাহার দুই ধারে সারি সারি মরা-গাছ; রাস্তায় ভিক্ষুকেরা বিচরণ করিতেছে—সেরূপ জীব কেহ কখন চক্ষে দেখে নাই; উহাদের কঠিন প্রাণ যেন কিছুতেই বাহির হইতে চাহে না; কিন্তু এবার বোধ হয় শেষ হইয়া আসিয়াছে;—যেন কতকগুলা আরকে-রক্ষিত শব; কতকগুলা শুষ্ক চলন্ত অস্থিপঞ্জর; চক্ষু কোটরে ঢোকা; ভিক্ষা চাহিবার সময় মনে হয়, যেন