পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২২
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

সর্ব্বাপেক্ষা অধিক—সেটি জগন্নাথরায়জির মন্দির। মহারাজের প্রাসাদগুলিও খুব শাদা,—একটি শৈলের উপর অধিষ্ঠিত; উহার এক পার্শ্ব হইতে সমস্ত সহর অবলোকন করা যায়। এই সকল প্রাসাদের ধবলপ্রভা একটা গভীর বৃহৎ সরোবরের উপর প্রতিফলিত,—চারিদিকে পর্ব্বত ও বনরাজি ঘিরিয়া আছে।

 ঘটনাক্রমে প্রথম হইতেই দুইটি ব্রাহ্মণ যুবকের সহিত আমার আলাপ পরিচয় হয়। ইহারা দুই সহোদর এবং উভয়েই বৃহৎ মন্দিবের পুববাহিত; যে সময়ে আমার আবাসগৃহ হইতে আমি বাহির হই না,—সেই নিস্তব্ধতার সময়ে, সেই জ্বলন্ত উত্তাপের সময়ে—ইহারা বুঝিয়া-সুঝিয়াই আমার সহিত এই পান্থশালায় সাক্ষাৎ করিতে আইসে। এই দুই ভায়ের একইরকম মুখ;—অতীব সুন্দর সূক্ষ্মাবয়ব মুখশ্রী; উভয়েরই বড়-বড় চোখ;যোগিজনের মত একটু রহস্যময় (Mystic)। ইহাদের বিশুদ্ধ কুল সঙ্কর্য্যদোষে কলুষিত না হইয়া, তিনসহস্র বৎসর হইতে অক্ষুন্নভাবে চলিয়া আসিতেছে। ইহারা সেই সব ধ্যানপরায়ণ ঋষিদের বংশধর—যাহারা প্রথম হইতেই, আমাদের মত অধম মানবকুলের বাহিরে ও বহু উর্ধে আপনাদিগকে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছে; যাহারা অপরিমিত পানাহারে, কিংবা বাণিজ্যে, কিংবা যুদ্ধে কখন লিপ্ত হয় নাই;—যাহারা একটি ক্ষুদ্র পশুকেও কখন হত্যা করে নাই; সাহারা আহারের জন্য কখন জীবহিংসা করে নাই। যে মাটির ছাঁচে ইহারা গঠিত, তাহা আমাদের হইতে ভিন্ন এবং আমাদের অপেক্ষা নির্ম্মল; মৃত্যুর পূর্ব্বেই ইহারা যেন একটু অশরীরী ভাব ধারণ করে; এবং ইহাদের ইন্দ্রিয়চেতনা এতটা স্থূলতাবর্জিত যে, এই অস্থায়ী জীবনের পরপার জিনিষসকলও বেশ দিব্যচক্ষে দেখিতে পায়।

 কিন্তু সে যাহাই হউক, আমি যে আশা করিয়াছিলাম উহাদের নিকট হইতে কিছু জ্ঞানালোেক পাইব, এখন দেখিতেছি, আমার সে আশা আকাশ কুসুমবৎ অলক। অনুষ্ঠান-আড়ম্বরের অপব্যবহারে পুরুষানুক্রমে ইহাদের