পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২৪
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

উপহার লইয়া আইসে, -কখন ফুল, কখন উহাদের ধরণে প্রস্তুত সামান্য মিষ্টান্ন। উহারা খুব ভদ্র ও মধুর প্রকৃতি। তথাপি আমাদের মধ্যে যেন একটা আকাশ-পাতাল ব্যবধান। উহারা আমার প্রতি যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করে, কিন্তু সেই সঙ্গে বর্ণভেদগত অপরিহার্য একটু ঘৃণার ভাবও যেন মিশ্রিত। রক্তমাংসকলুষিত যে সব খাদ্যে আমি পুরুষানুক্রমে অভ্যস্ত সেই কর্দায্য সামগ্রী উহার প্রাণান্তেও ভক্ষণ করিবে না; এমন কি আমার হস্ত হইতে জলপাত্রও গ্রহণ করিবে না; শুধু তাহা নহে, আমার সমক্ষে কোনকিছু আহার করা কিংবা পান করাও উহারা কলঙ্কের বিষয় মনে করে;—সে কলঙ্ক কিছুতেই ক্ষালিত হইবার নহে।

 অন্যদিন যে সময়ে উহারা আইসে, আজ প্রাতে তাহার কিছু পূর্ব্বে আসিয়া আমার ঘরের দরজা খুলিয়া ভিতরে প্রবেশ করিল; সেই সঙ্গে সূর্যের জ্বলন্ত কিরণচ্ছটা, একরাশি উড়ন্ত ধূলা, অগ্নিকুণ্ডবৎ আগুনের একটা তপ্তনিশ্বাসও প্রবেশ করিল। আজ উহাদের একটা উৎসবদিন, এই কথা আমাকে জানাইতে আসিয়াছে। আজ উহারা আমার নিকট আর আসিতে পারিবে না; সূর্যাস্তের পর, ইচ্ছা করিলে আমি উহাদের নিকট যাইতে পারি;—মন্দিরের প্রথম ঘেরটির মধ্যে গেলে উহাদের সহিত আমার সাক্ষাৎ হইতে পারিবে, ইত্যাদি।

 এখানে উৎসবাদির সময়ে যেরূপ মাল লোকে গলায় পরে, সেইরূপ মালা উহারা আমাকে দিয়া গেল; এই মালা খাঁটি জুঁই ফুলের;—এই জাতীয় জুঁইফুল দক্ষিণভারতে অপরিজ্ঞাত-এই ছোট ছোট শাদা-ফুলের মালা আমার শৈশবের পর, আর কখন দেখি নাই—এতদিনের পর আজ আবার দেখিলাম। আমার শৈশবদশায়, আমাদের পারিবারিক গৃহের প্রাঙ্গণে যুথী-অলঙ্কৃত প্রাচীরের ছায়ায় বসিয়া,—আমার বন্ধুদ্বয় আজ আমাকে যে ফুলের মালা উপহার দিয়াছেন—সেইরূপ মালা গাঁথিবার চেষ্টা করিতাম। হঠাৎ আজ সেই সুদূর অতীতের স্মৃতি আমার মনে