পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সিংহলে।
১৯

প্রস্তরময় পরিচ্ছদগুলি লাল নীল রংএ রঞ্জিত। এ সব সত্ত্বেও, ঐ আয়ত-নেত্র মহোদয়গণকে পুরাকালের লোক বলিয়াই মনে হয়।

 আমি এখানে হঠাৎ আসায়, এই দেবতাদিগের গুহায় আজ একটু আলোক প্রবেশ করিয়াছে; দেবতারা,সম্মুখস্থ বিমুক্ত দালানের মধ্য দিয়া যেথানে তাহাদিগের পূর্ব্ব শতাব্দীর ভক্তগণ বাস করিতেন—সেই জঙ্গলের দূরদিগন্তদেশ পর্য্যন্ত এক্ষণে অবলোকন করিবার অবসর পাইলেন।

 আমি তাহাদের মুখ-পানে একবার চাহিয়া দেখিলাম, পরক্ষণেই মন্দির-রক্ষক পুরোহিতেরা দেবালয়ের সেই পুণ্য-কক্ষটি আবার বন্ধ করিয়া দিল; শৈলগহ্বরবাসী দেবতারা স্বকীয় সুরভিত অন্ধকার ও নিস্তব্ধতার মধ্যে আবার নিমগ্ন হইলেন।

 আমি বিদেশী-আমার নিকটে, বৌদ্ধদিগের এই সকল সাঙ্কেতিক মূর্তি, বৌদ্ধধর্ম্মের শান্তি, এখনও প্রহেলিকাবৎ দুর্জ্ঞেয়।

 আমি চলিলাম। পীতবসনধারী রক্ষকেরাও স্বকীয় আশ্রম-নিবাসে ধীরে ধীরে প্রস্থান করিলেন।

 এই অপূর্ব্ব মন্দিরপুরোহিতদিগের আর কোন পার্থিব চিন্তা নাই। দেবালয়ে ফুল সাজানই উহাদের একমাত্র কাজ। এই বিজন আশ্রমে থাকিয়া, সুখ-দুঃখ-বিবর্জ্জিত হইয়া, যাহাতে দীর্ঘকাল জীবনযাপন করিতে পারে, এবং এই নশ্বর জীবনের পরেও, যাহাতে জন্ম-বন্ধন হইতে মুক্ত হইয়া ব্যক্তিত্বহীন যোরতমসাচ্ছন্ন অনন্তের মধ্যে আপনাকে বিলীন করিতে পারে,—ইহাই তাহাদের একমাত্র আশা।

 এই শৈল-মন্দিরের জঙ্গল ত্যাগ করিয়া, যখন আবার সেই অরণ্য-সুপ্ত অনুরাধপুরে প্রবেশ করিবার জন্য যাত্রা করিলাম, তখন সূর্য অস্তোন্মুখ। রাত্রিকালে ধ্বংসাবশেষের মধ্যে বিচরণ করিয়া, কল্য প্রভাতেই আবার এখান হইতে প্রস্থান করিব।

 ‘চন্দ্র’-পথ ও ‘রাজ’-পথ -এই দুটি রাস্তা সবচেয়ে বড়।