পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২৬
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

 আজ এই প্রথম উহাদিগকে প্রায়-নগ্ন অবস্থায় দেখিলাম; উহাদের দেবতার সম্মুখে উহারা এইরূপ নগ্নভাবেই অবস্থিতি করে। তাম্রপ্রতিমূর্তির বক্ষোদেশের ন্যায় উহাদের সুন্দর বক্ষের উপর যজ্ঞোপবীতটি তির্যভাবে লম্বমান; উহাদের বিস্ফারিত নেত্রযুগল কেমন একটা অন্যমনস্কভাব, যাহা পূর্ব্ব্বে আমি কখন দেখি নাই।

 কিন্তু তবু উহাদের ভদ্রতার কোন ক্রটি নাই। বিষ্ণুদেবের একটা তাম্রময় বিগ্রহের পদতলে, এমন কি, মন্দিরদ্বয়েব ঠিক সম্মুখে, একটা সম্মানের আসনে উহারা আমাকে বসাইল।

 বেশভূষায়, দোকানদারে, মন্দিরপ্রাঙ্গণ অচ্ছিন্ন: তাদের ঝুড়িগুলি শাদা জুঁইফুলের মালায় পূর্ণ। এই সমস্ত ফুলরাশির মধ্যে, দুর্ভিক্ষের প্রেমূর্তিগুলা -ভয়ঙ্করবর্ণবিশিষ্ট কতকগুলা নরকঙ্কাল ইতস্তত বিচরণ করিতেছে;— উহাদের চোখ জরবিকারগ্রস্ত রোগাব ন্যায়।

 আমার সম্মুখে ব্রাহ্মণেরা মন্দিরের সোপান দিয়া ওঠানাবা করিতেছে, সোপানের উপবে দুই পার্শ্বে বড়-বড় পাথরের হাতী আকাশের দিকে শুড় তুলিয়া রহিয়াছে। সকলেরই শুভ্র পরিচ্ছদ, কটিদেশে অসি, এবং পক্ষের উপর থাকে-থাকে অনেকগুলি মালার গোচ্ছা। বৃদ্ধদিগের তুষারশুভ্র শ্মশ্ররাজি—রাজপুতের পরণে দুই পাশে চড়াইয়া তোলা,—দেখিতে কতকটা শাদা বৃদ্ধ মার্জ্জারের নত। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিশু;—পা এত ছোট যে, অতি কষ্টে ধাপের উপর উঠিতেছে; কিন্তু উহাদের মুখে একটা গাম্ভীর্যের ভাব ও তীক্ষ্ণদর্শিতা প্রকটিত;—মাথায় জরির কাজকরা মখমলের টুপি। রমণীগণ দেখিতে চমৎকার,—পুরাতন গ্রীসীয়-বরণে পরিচ্ছদপরিহিত;জরির নক্সা-কাটা বিবিধ বর্ণের নমস্তু; অথবা, কালো রঙের মলমম্‌বস্ত্রের উপর রুপালি-চুমকি-বসানো। তমসাচ্ছন্ন ও দুর্গম মন্দিরের অভ্যন্তরপ্রদেশ হইতে গুহাসমুখিত গভীর নাদের ন্যায় একপ্রকার সঙ্গীতধ্বনি-মধ্যে মধ্যে বৃহৎ ঢকার বজ্জবৎ গার্জ্জনধ্বনি আমার কর্ণকুহরে আসিয়া পৌঁছিতেছে।