পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজপুতরাজার গৃহে।
২৩৩

উচ্চ। ইনি সূর্য্যবংশীয়। বহু-বহু শতাব্দী পূর্ব্বে—যখন য়ুরোপের প্রাচীনতম রাজবংশাবলীর অস্তিত্বমাত্র ছিল না—তখন ইহার পূর্ব্বপুরুষগণ দিগ্‌ বিজয়ার্থ, অথবা বন্দীকৃত রাণীদের উদ্ধারার্থ বিপুল সৈন্য সংগ্রহ করিতেছিলেন।[১]

 বিষ্ণুর অবতার মহাবীর রাম সূর্য্যবংশীয় রাজাদের আদিপুরুষ—এইরূপ রামায়ণে বর্ণিত হইয়াছে। ইহার দুই পুত্র। জ্যেষ্ঠ লাহোরনগর প্রতিষ্ঠা করেন; কনিষ্ঠের কোন উত্তর-পুরুষ একাদশ শতাব্দীতে রাজপুতদিগের উপর আধিপত্য বিস্তার করেন। যাহাই হউক, ৫২৪ খৃষ্টাব্দে, যখন উত্তরদেশীয় বর্ব্বরগণ দেশ আক্রমণ করিয়া লুঠপাট করে, তখন এই বংশের সমস্ত রাজাই নিহত হন; কেবল একজন রাণী—যিনি তীর্থযাত্রায় বহির্গত হইয়াছিলে—তিনিই রক্ষা পান। তিনি গর্ভবতী হইয়া একটা গুহার মধ্যে লুকাইয়া ছিলেন। তিনি সেই গুহার মধ্যেই একটি পুত্র প্রসব করিয়া মৃত্যুমুখে পতিত হন। পুরোহিতের এই শিশুটিকে কুড়াইয়া আনে। কিন্তু ইহাকে আগলাইয়া রাখা কঠিন হইল; উষ্ণ রাজশোণিতের প্রভাবে, শিশুটি পর্ব্বতবাসী ভীদিগের বর্ব্বর ব্যায়ামক্রিয়ামোদে লিপ্ত হইল। ভীলেরা উহাকেই সর্দাররূপে বরণ করিল। পরে এই সকল ভীলবীরদিগের মধ্যে একজন,রাজচিহ্নস্বরূপ, নিজের আঙুল কাটিয়া সেই রক্তে তাঁহার ললাট চিহ্নিত করিল। অবশেষে, ৭২৩ খৃষ্টাব্দে, এই গুহাকুমারের বংশধরেরাই এখানকার অধিপতিরূপে প্রতিষ্ঠিত হন। সেই অবধি এই বাজবংশ অবিচ্ছেদে চলিয়া আসিতেছে। ১৩শত বৎসর পরে এখনো সেই অভিষেক প্রথাটি অক্ষুন্ন রহিয়াছে; প্রত্যেক নূতন রাজার অভিষেক সময়ে,—সেই আদিমঘটনার স্মরণার্থে,–এখনো নবভূপতির ললাটদেশ ভীলহস্তে রক্তের দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।

  1. রামায়ণে বর্ণিত লঙ্কা-আক্রমণ।