পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩৪
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

ল্যাণ্ডৌ-গাড়ি একটা অন্তঃপ্রাঙ্গণে আসিয়া থামিল। এই প্রাঙ্গণটি তাল ও ঝাউগাছে সুশশাভিত। শুভ্রপরিচ্ছদধারী, রাজবাটীর একজন কর্ম্মচারী এইখানে আমাকে অভ্যর্থনা করিলেন।

 ভারতের অন্যান্য রাজাদিগের ন্যায় এই মহারাজারও অনেকগুলি প্রাসাদ। সর্ব্বপ্রথমে যে প্রাসাদটি আমি দেখিলাম, উহা আধুনিক ধরণের; য়ুরোপীয়-ধরণের বৈঠকখানা-ঘর; বড়-বড় আয়না; রৌপ্যসামগ্রীতে ভারাক্রান্ত সজ্জা-টেবিল; বিলিয়ার্ড-টেবিল;—ভারতের একটি নগরে, এই সমস্ত অপ্রত্যাশিত দ্রব্যসামগ্রী দেখিয়া বিস্মরবিহবল হইতে হয়।

 কিন্তু মহারাজা নিজে, তাঁহার পূর্ব্বপুরুষদিগের পুরাতন অবাসগৃহটিই বেশী পছন্দ করেন। সেইখানেই তিনি আমাকে দর্শন দিবেন; সেইখানেই এখন আমার যাইতে হইবে।

 প্রথমেই, কতকগুলি ছোট ছোট বাগান-বাগিচা ও কতকগুলি নিস্তব্ধ সুঁড়িপথ পার হইলাম। পরে, কোণালু খিলান ও তাম্রকপাটবিশিষ্ট একটা দ্বার পার হইয়াই হঠাৎ দেখি—সম্মুখে জনতা। জনকোলাহল ও কর্ণরোধী উৎকট বাদ্য। আমরা একটা বিশাল প্রাঙ্গণে আসিয়া পড়িয়াছি। এইখানে হস্তিগণের যুদ্ধক্রীড়া প্রদর্শিত হয়। ইহারই এক পার্শ্বে, শুভ্রমুখচ্ছবি পুরাতন প্রাসাদ পূর্ণমহিমায় বিরাজমান। প্রাচীনধরণের খোদাইকাজে, নীলবর্ণ মৃন্ময় ঘটে, সোনালি সূর্য্যের নক্‌সায়, প্রাসাদের সম্মুখভাগ বিভূষিত। প্রাঙ্গণের অপর পার্শ্বে-প্রাচীরের গায়ে সারি-সারি ঘর। সেইখানে শৃঙ্খলবদ্ধ হস্তিগণ, গা দোলাইতে দোলাইতে তৃণচর্বণ করিতেছে। মধ্যস্থলে,ভীষণ সাজে সজ্জিত তিনচারিশত লোক-দেবদাৎসব উপলক্ষে সমাগত পর্ব্বতবাসী ভীল; ইহারা যষ্টির দ্বারা পরস্পরকে আঘাত, করিতে করিতে একপ্রকার যুদ্ধনৃত্য করিতেছে এবং সেই সঙ্গে সানাই, শিঙা, প্রকাণ্ড ঢাকঢোল ও কাংস্যকর্ত্তালের বাদ্য চলিতেছে। একটা ছাদের উপর, শতশত রমণী উহাদের নৃত্য দেখিবার জন্য ঝুঁকিয়া