পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

বালুকাচ্ছন্ন রাস্তাটি আয়তনে উহাদের চতুর্থাংশ। “‘চন্দ্র’-পথের দুই ধারে এগারো হাজার কোঠা বাড়ী দৃষ্ট হয়। সদর-দরজা হইতে দক্ষিণের দ্বার পর্যন্ত দূরত্বে আট ক্রোশ; এবং উত্তর-দ্বার হইতে দক্ষিণ-দ্বার পর্যন্ত ঠিক আর আট ক্রোশ।”

 অরণ্যের বৃক্ষতলে কত রাশি-রাশি প্রস্তর, প্রাচীন ধরণের কত পাষাণ-প্রতিমা—তার আর শেষ নাই। কিরীট-ভূষিত দেব দেবী; কুম্ভীরের দেহ, হস্তীর শুণ্ড ও পক্ষীর পুচ্ছবিশিষ্ট বিকটাকার বিবিধ মূর্তি। আর, থামের পর থাম চলিয়াছে;—কতকগুলি স্তম্ভ শ্রেণীবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান, কতকগুলি ভগ্ন ও স্বস্থান-ভ্রষ্ট। তা ছাড়া, ভগ্ন-গৃহের, কত যে দেহলী, তার আর সংখ্যা নাই। দ্বারদেশের সোপান-ধাপের প্রত্যেক ধারে এক-একটি ক্ষুদ্র স্মিতাননা দেবী-মূর্ত্তি, লতা পাতা শিকড়-জালের মধ্যে আসিবার জন্য যেন ইঙ্গিতে আহবান করিতেছে। এই সকল গৃহের গৃহস্বামীরা সেই তমসাচ্ছন্ন পুরাকালে অতীব আতিথেয় ছিলেন, সন্দেহ নাই; কিন্তু বহু শতাব্দী হইতে ইহাদের ভস্ম পর্যন্ত বিলুপ্ত হইয়াছে।

 কনক-রাগ-রঞ্জিত সায়াহ্নে, আমার আবাস-গৃহ হইতে বহুদূরে, রাজাদের প্রাসাদ-অঞ্চলে গিয়া উপস্থিত হইলাম। সেখানে বৃহৎ ভিত্তিবেষ্টন ও প্রস্তরখোদিত সোপান-ধাপ ভিন্ন আর কিছুই অবশিষ্ট নাই। চারিদিকে শ্মশানের নিস্তব্ধতা। একটি কীটের শব্দ নাই, একটি পাখীর ডাক নাই। এইখানে একটি বৃহৎ চতুষ্কোণ পদ্ম-পুষ্করিণীর ধারে আমি বিশ্রাম করিতেছি। পুষ্করিণীর ধার পাথর দিয়া বাঁধানো; ইহা গজরাজদিগের স্নানাগার। অরণ্যের মধ্যে এইটুকুই তরুশূন্য মুক্ত পরিসর।

 এই পুষ্করিণীর জলে ক্রমাগত বুদবুদ উঠিয়া এক একটা চক্র রচনা করিতেছে; এই কবোষ্ণ জলের মধ্যে সর্প কুম্মের সহিত যে সকল রূম্ভীর সকলে, তাহাদের নিশ্বাসবায়ুতে এই জলবুদ্বুদগুলি উৎপন্ন হইতেছে।