পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সিংহলে।
২১

 এই অঞ্চলের মধ্যে ঝোপ-ঝাড় কিছুমাত্র নাই। অরণ্যস্থিত ধ্বংস- রাজ্যের দূর প্রান্ত পর্যন্ত চারি দিকে আমার দৃষ্টি অবাধে সঞ্চরণ করিতেছে। পশ্চিম দিগন্তে হঠাৎ যেন একটা আগুন জ্বলিয়া উঠিল। গাছের ফাকে রশ্মি প্রবেশ করিয়া আমার চক্ষু যেন ঝলসিয়া দিল;—উহা অস্তমান সূর্য্য ভিন্ন আর কিছুই নহে। পৃথিবীর যে অক্ষাংশবৃত্তে আমরা অবস্থিত, তাহাতে শীঘ্রই রাত্রি আসিয়া পড়িবে।

 আরও বেশী দেখিবার জন্য আমি তাড়াতাড়ি আরও দূরে চলিয়া গেলাম। আজ সন্ধ্যায় যতক্ষণ পারি ভ্রমণ করিব; কেন না, আজ এখানে আমার শেষ দিন।

 দিবাবসানে, আমি যে নূতন ভূভাগে প্রবেশ করিলাম, তাহা আমার নিকট অতীব রমণীয় বলিয়া বোধ হইল। ভূমির মৃত্তিকা সুকুমার, একটু শুষ্ক, একটু বালুকাময়, ছোট ছোট তৃণে আচ্ছন্ন; শৈশবে যে অরণ্য-ভূমির সহিত আমি পরিচিত ছিলাম, ইহা কতকটা সেইরূপ। ইহা ছাড়া আরও কতকগুলি জিনিস দেখিয়া জন্মভূমি বলিয়া আমার যেন আরও বিভ্রম উপস্থিত হইল। সেই সেখানকারই মত কৃষক ও গোমেষা- দির পদক্ষুন্ন মেঠো পথ; আমাদের দেশের ওক্‌গা‌ছের ন্যায়, বন-শ্যামল- ক্ষুদ্র-পল্লব-যুক্ত ও ধূসরবর্ণের শাখা-প্রশাখা-বিশিষ্ট সেই তরুগণ, সেই, মেঠো নিস্তব্ধতা, সেই সন্ধ্যার বিষন্নতা * * কিন্তু এই ভগ্নাবশেষগুলি, এই বৃহৎ প্রস্তরগুলি, নিত্য নিয়ত আমার নেত্র-সমক্ষে থাকায়, বিশেষতঃ এই পাষা-প্রতিমাগুলির রহস্যময় মুখশ্রী আমার মনে সতত জাগরূক থাকায়, এই স্বদেশসম্বন্ধীয় বিভ্রমটি অধিকক্ষণ স্থায়ী হইতে পারে না। ক্রমশঃ অন্ধকার ঘনাইয়া আসিতেছে। যে সকল নিঃসঙ্গ বুদ্ধ-মূর্ত্তি ধ্যানাসনে উপবিষ্ট হইয়া স্মিতমুখে শূন্যের দিকে চাহিয়া আছে, তাহাদের ছায়াও যেন এই অন্ধকারে ভয়-বিচলিত হইয়া উঠিয়াছে।

 এখান হইতে ফিরিয়া, কুকুর ও নেকড়েঘদিগের মধ্য দিয়া, এক্ষণে