পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪৬
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

করে। এখানে খাদ্যসামগ্রী পাওয়া যায় সত্য, কিন্তু উহা ক্রয় করিতে হয়। ক্রয় করিবার জন্য অর্থ চাই। সত্য বটে, রাজধানীতে যে সকল দরিদ্রের বসতি, রাজা তাহাদিগকে অর্থাদি বিতরণ করিতেছেন। কিন্তু চতুষ্পার্শ্বস্থ ক্ষেত্রভূমির শতসহস্র কৃষক, যাহারা অন্নাভাবে ক্ষুধার জ্বালায় মরিতেছে, তাহাদের সাহায্যের জন্য এই অর্থে কুলায় না। তাই উহাদিগকে আসিতে দেওয়া হইতেছে না। তাই তাহারা রাস্তায়-রাস্তায় ঘুরিয়া বেড়াইতেছে, আহারস্থানের চারিদিকে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে—শুধু এই আশাভরে, যদি কেহ একমুষ্টি চাউল তাহাদের নিকট নিক্ষেপ করে। তাহার পর, যখন শয়নের সময় হয়, তখন উহারা যেখানে হয় একস্থানে শুইয়া পড়ে; এমন কি, পদপথের সানের উপরেই শুইয়া পড়ে। বোধ হয়, উহাই তাহাদের অন্তিমশয্যা।

 এইমাত্র শ-খানেক বস্তার চাউল উষ্ট্রপৃষ্ঠে এখানে আসিয়া পৌঁছিল। ধান্যাগারগুলা বোধ হয় পূর্ণ হইয়া গিয়াছে। তাই ধান্যাগারের সম্মুখস্থ পদপথের উপর এই বস্তাগুলা নামাইয়া রাখিতে হইবে। ৫ হইতে ১০ বৎসরের কঙ্কালসার নগ্নকায় তিনটি শিশু সেইখানে বিশ্রাম করিতেছিল। একজন প্রতিবেশী বলিল,—“ইহারা তিনটি ভাই; ইহাদের মা-বাপ—যাহারা উহাদের আনিয়াছিল, তাহারা মরিয়াছে (বলা বাহুল্য, ক্ষুধার জ্বালায়); তাই, উহারা এইখানেই পড়িয়া আছে, উহাদের আর কেহ নাই।” যে স্ত্রীলোকটি এই কথা বলিতেছিল, তাহার কথার ভাবে মনে হইল, এসমস্তই যেন স্বাভাবিক ঘটনা। আকারপ্রকারে স্ত্রীলোকটি দুষ্টা বলিয়াও মনে হয় না!…কি ভয়ানক! ইহারা কিরকম লোক? ইহাদের হৃদয় না-জানি কি উপাদানে গঠিত! এদিকে ইহারা একটি পাখী মারিবে না; অথচ ইহাদের দ্বারের সম্মুখে কতকগুলা অনাথ পরিত্যক্ত শিশু অনাহারে মরিতেছে, তাহা দেখিয়াও উহাদের হৃদয় একটুও বিচলিত হইতেছে না।